বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ বাড়বে: অর্থনীতিবিদদের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৩৯

দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য আইএমএফের ঋণ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। তবে সংকট উত্তরণের জন্য আর্থিক ও রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রয়োজন। অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি বাড়াতে না পারলে, বৈশ্বিক সংকট মোকবেলার চ্যালেঞ্জ বাড়বে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দেন অর্থনীতিবিদরা।

গবেষণা সংস্থা সানেম আয়োজিত অর্থনীতিবিদ সম্মেলন এ অভিমত তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা।

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন ২০২৩ চলবে আজ রবিবার পর্যন্ত। ২০টি সেশনে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নিয়ে আলোচনা করবেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। এখানে দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য অনেকে অংশ নিচ্ছেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সম্প্রতি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ছে, সঙ্গে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তিও পেয়েছে বাংলাদেশ। সুতরাং আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো হবে। ডলার সংকট কেটে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ঋণ প্রদানে আইএমএফ কোনো শর্ত দেয়নি, তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আমরাও মনে করি এসব পরামর্শের অনেকগুলোই যৌক্তিক। তাই এসব পরামর্শের কিছু কিছু বাস্তবায়ন শুরু করছে সরকার। কোনো দেশের বৈদেশ্বিক লেনদেনে ঘাটতি দেখা দিলে সেই সমস্যায় সহযোগিতা করায় আইএমএফের কাজ। বাংলাদেশেও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছে। আর এই ঘাটতি পূরণে সময় মতো এগিয়ে এসেছে আইএমএফ। যা আমাদের বৈদেশ্বিক মুদ্র্যার রিজার্ভ পরিস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এসব সংস্কার বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বাড়াবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক আগে থেকেই আছে।কিছু সংষ্কার বেদনাদায়ক তবে এটাতে দরিদ্র বা আয় বৈষম্য বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ সরকার খুবই ভালো ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এসব করছে।

রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই এমন বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন ধরে সংসদে আছেন, সংসদ চলাকালীন পুরোটা সময় দিয়ে থাকেন। এছাড়া জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ কার্যকর করা হয়েছে, স্থানীয় সরকারগুলোও কার্যকর আছে। সুতরাং দেশের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে। এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠানে ‘বিল্ডিং রেজিলেন্স টু শক: প্রসপারিটি, চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড প্রসপেক্ট’ শীর্ষক সেশনের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি জন্য বৈশ্বিক সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়, যা ঠিক না। দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণেই অর্থনীতি বর্তমান অবস্থায় পড়েছে। এই সমস্যা স্বীকার করে উত্তরনের জন্য কাজ করতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে ঋণখেলাপীর পরিমাণ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন। ২০০৮ সালে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমান ছিল ২৫ হাজার কোটিতে, এখন তা ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও এখনও আগের জায়গায় রয়ে গেছে, যা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সংস্কার আনা প্রয়োজন। বাড়াতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। রাজস্ব আহরণ ও জিডিপির অনুপাত এখনও বেশ কম। এখান থেকে উত্তরণের ভাবনা থাকতে হবে। থাকতে হবে উদ্যোগ। অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি বাড়াতে না পারলে, বৈশ্বিক সংকট মোকবেলার চ্যালেঞ্জ বাড়বে। খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন ‘মিডল ইনক্যাম ট্র্যাপে’ না পড়ি।

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক এবং রাজস্ব খাতে সংস্কারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বাস্তবায়নে তৎপরতা বাড়াতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের এই সম্মেলনে দ্বিতীয় পর্বে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের রিজার্ভ এক সময় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারও ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় কথা নয় বরং দেখতে হবে, প্রবণতা কী? রিজার্ভের প্রবণতা নিচের দিকে নামতে থাকলে ঠেকানো কঠিন।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো সময় মতো শুরু ও শেষ করতে হবে। অন্যথায় ব্যয় অনেক বেড়ে যায় এতে সরকারের উপর চাপ বাড়ে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিতে অনেক শর্তের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার। খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে আইএমএফের আমলাতন্ত্র খুশি, আমরাও খুশি।

অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, বর্তমান সংকটে শিক্ষা ও পুষ্টির মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়েও কাঁটছাট করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। ফলে নিজে থেকেই সক্ষমতা হারাচ্ছেন তারা।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, ডলার সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতা একদিনে তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের সতর্ক বার্তা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/আরকেএইচ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

মানসিকতার পরিবর্তন না হলে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন কঠিন হয়ে যাবে: শিক্ষামন্ত্রী

বাংলাদেশে দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে গ্রিস

ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার

যেভাবেই হোক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাস করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

মিয়ানমার সংকট সমাধানে একজনের খুশির জন্য বাকিদের নারাজ করবে না বাংলাদেশ: সেনা প্রধান

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল ৪ টাকা, কমেছে খোলা তেলের

কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত হবে

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি: প্রধানমন্ত্রী

বৃষ্টিতেও কমছে না তাপপ্রবাহ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :