রোজা-ঈদ: ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে ঢাকাজুড়ে নজরদারি
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৫ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৭
আগামী মাসে পবিত্র রমজান শুরু। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান ও ঈদ টার্গেট করে মাঠে নেমেছে একাধিক অপরাধীচক্র। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির।
তবে রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক অপরাধ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা গোটা রাজধানীজুড়ে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
একই সঙ্গে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে। এসব চক্র সম্পর্কে ডিবি পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি) চক্রগুলো সক্রিয় হওয়ার খবর জানতে পেরেছে। ডিবি পুলিশ বলছে, রমজান ও ঈদ ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিনতাই ও ডাকাত চক্রগুলো। এ সময় চুরি, ছিনতাই কিংবা লুটের মতো ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা হাতে নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ইতোমধ্যে তদন্তে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ছাড়াও স্বর্ণ ছিনতাই কিংবা লুটের সঙ্গে জড়িত এমনকি হুন্ডির টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত এ রকম অনেকের নাম পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে গোয়েন্দারা। এ ছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিটি ইউনিট রাজধানীজুড়ে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি রাখছে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চুরি-ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছে একাধিক চক্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় পেলে কেউ এগিয়ে আসে না। এ কারণে পরিচয়টি ব্যবহার করে অসাধু চক্রগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে মানুষকেও যাচাই করা দরকার।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট থানায় কিংবা গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ করলে সেসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত এবং এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। একেকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ভিন্ন ভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি জানা যায়।
শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় নয়, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেও অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। তার অবস্থান ও পরিচয় যা-ই হোক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশ সদস্যরাও কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। কোনো ছাড় দেওয়া হয় না।
সম্প্রতি বনানীতে প্রাইভেট কার থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাপিড ব্যাটালিয়ন র্যাবে কর্মরত একজন সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
বিভিন্ন সময় দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম আসছে। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেন যেসব প্রতিষ্ঠানে বেশি হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে অসাধু চক্রের সদস্যরা। পরে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন কিংবা বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সময় ছিনতাই কিংবা ডাকাত দলের সদস্যদের আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সে খবরের ভিত্তিতে ছিনতাই কিংবা ডাকাতের চক্রগুলো নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় অবস্থান করে গতিরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেয়।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের এক অভিযানে দেখা যায়, রাজধানীর সূত্রাপুরে একটি খাবার রেস্টুরেন্টে বসে ডাকাতির পরিকল্পনার সময় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র থেকে ফাঁকা গুলি চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যবসায়ীদের অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ এই চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রের মূল হোতা কাউসার ও মাহতাব। তারা থাকে পটুয়াখালীতে। সেখানে রাজনীতি করলেও রাজধানীতে এসে তারা করছে ডাকাতি। অবৈধ এসব টাকা দিয়ে চক্রটি পটুয়াখালীতে জমি কিনেছে এমনকি নতুন বাড়ি নির্মাণ করছে, এমন তথ্যও পেয়েছে গোয়েন্দারা।
গ্রেপ্তারকৃত কাউসার জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের জানায়, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা পরিবহনের তথ্য আগেই তাদের জানিয়ে দেয়। পরে তারা পুলিশ পরিচয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন কোনো স্থানে সেই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়। সঙ্গে থাকা অস্ত্রের কারণে কেউ কোনো ধরনের আওয়াজ কিংবা কারও সহায়তা চাওয়ার সাহস করে না। যে এসব ঘটনার রেকি করে তাকে দেওয়া হয় মূল টাকার দুই ভাগ, ঘটনার সময় যে অস্ত্র পরিচালনা করে সে নেয় দুই ভাগ, যারা হোন্ডা চালায় তাদের দেওয়া হয় এক ভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাসে করে টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বাস থামিয়ে চারজন অস্ত্রসহ বাসটিতে ওঠে। এ সময় তারা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়েই আমাকে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় আমার কাছে অবৈধ জিনিসপত্র আছে বলে। পরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার সঙ্গে থাকা ৪১ লাখ ভর্তি টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অনেক সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সদস্যরা ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। টাকা আদান-প্রদানের সময় কিংবা বহনের সময় কোন রুট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, এসব বিষয় ঢাকার দলের সদস্যদের অবহিত করে। মোটা অঙ্কের টাকা বিশেষ করে হুন্ডির টাকা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায় তাদের মধ্যেও একটি অসাধু চক্র তারা ভাগ-বাটোয়ারা নাম দিয়ে তারা তাদের অসৎ উপায়ে ছিনতাই কিংবা ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এ সময় ঘটনা প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/ আরআর/আরকেএইচ)