বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী মার্চ মাসে পবিত্র রমজান। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। তবে রমজানে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ ভোক্তার যাতে না থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ বছর ডলার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে রমজান শুরুর দুই মাস আগে থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট। 

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় সব ধরনের ডাল, ভোজ্যতেল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ যাতে সিন্ডিকেটের হাতে চলে না যায়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি তাদের। সিন্ডিকেটের কব্জা থেকে বাজারকে মুক্ত করতে শক্ত তদারকি ব্যবস্থা চান ভোক্তারা। 

গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রমজান ও ঈদ সামনে রেখে ডলার সংকটের অজুহাতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরবরাহ সংকট না থাকলেও বাড়তি দামেই নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে মানষকে। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনিসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের বুকিং রেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলেও দেশের বাজারে এখনও আকাশছোঁয়া দাম। নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। 
গতকাল দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬ মাস লাগামহীন থাকার পর অবশেষে কিছুটা কমেছে সয়াবিন তেলের দাম। তাও মণ প্রতি কমেছে মাত্র ১০০ টাকা। কিন্তু পাম তেল এবং সুপার সয়াবিনের দাম যথারীতি বাড়তি।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স আব্বাস সওদাগরের ম্যানেজার জাফর আহমেদ বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বেশি থাকায় বেচাবিক্রি খুবই কমে গেছে। যার কারণে বাজার স্থিতিশীল থেকে গেছে।

অথচ এই মুহূর্তে বিশ্ববাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের বুকিং রেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে তেলবাহী অসংখ্য অয়েল ট্যাংকার। তারপরেও তেল নিয়ে কারসাজি চলছে।

এবিষয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স সবুজ কমার্শিয়াল মালিক শাহেদ উল আলম বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতি মণ পাম তেলের দাম হচ্ছে ৯৬০ থেকে ৯৭০ ডলার। যা আগে ছিল ১ হাজার ১০ থেকে ১ হাজার ২০ ডলার। আর সয়াবিন তেলের মণ হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭০ ডলার।

এদিকে পর্যাপ্ত আমদানি থাকার সত্ত্বেও কোনোভাবে দেশের ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অথচ রমজান শুরুর এখনও দেড় মাস বাকি। বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৫৮০ মার্কিন ডলার এবং ভারতীয় ছোলা ৬৮০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। বুকিং রেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলেও ডলার সংকটের অজুহাতে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স তৈয়বীয়া ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা বলেন, চলমান ডলার সংকটের কারণে অনেকেই ছোলা কিনতে পারছেন না। সেজন্য বাজারে পণ্যটির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে চাহিদা থাকায় দাম বাড়তি।
ছোলার মতো পরিস্থিতি চিনির বাজারেও। এক সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনির দাম ৩ টাকা বেড়ে ১০৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে চিনির বুকিং রেট প্রতি মেট্রিক টন এখনও ৫৩০ মার্কিন ডলার। তেমন কোনো সংকট না থাকলেও কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স এ এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল আলম লিটন বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি পাচ্ছি। আমরা সেটি ১ টাকা লাভে বিক্রি করছি। অর্থাৎ ৫ টাকায় কিনলে তা ৬ টাকায় বিক্রি করছি।’
রমজান মাসে এক লাখ মেট্রিক টন ছোলা, তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল এবং সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)