স্বামী-সন্তানদের খুঁজে দেয়ার নামে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০০ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সাবেক স্বামী ও সন্তানদের খোঁজে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বিল্লাল হোসেন, আল-আমিন হোসেন, সবুজ, রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল ও শফিকুল ইসলাম।

শনিবার রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রবিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক জানান, ভুক্তভোগী নারী স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বছিলায় বসবাস করতেন। ৪ মাস আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এর মধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন।

গত ২৫ জানুয়ারি দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা থেকে তালাকের কারণসহ এ বিষয়ে আলোচনা করতে স্বামীর সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি তার আগের বাসায় এসে সাবেক স্বামী ও সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক, পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়াদের কেউই তার স্বামী-সন্তানদের কোনো ঠিকানা দিতে পারেননি।

এভাবে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত বছিলা চল্লিশফিট, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেনসিটি হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও এর আশপাশের এলাকায় খুঁজ করে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি বছিলা চল্লিশফিট তিনরাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া নেন।

কিন্তু রিকশাওয়ালা ওই নারীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন। রিকশাওয়ালা এসময় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। তিনি ওই নারীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বসিলা ফিউচার টাউনের একটি জায়গায় গিয়ে রিকশাচালক ও তার সঙ্গীরা ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে ৫ জন ভিকটিমকে হত্যার হুমকি দিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এক পর্যায়ে নারীর চিৎকারে এলাকায় কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ড ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা ভিকটিমকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। এরপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওসিসিতে পাঠানো হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ২৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ ক্লুলেস। ভিকটিম নারীও আসামিদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের অসংখ্য সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে ভিকটিম নারীর মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

উপ-কমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৫ জন ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ও ২ জন আশপাশে অবস্থান করে সহযোগিতা করে। আশা করছি দ্রুততম সমময়ে সহায়তাকারী ২ জনকেও গ্রেপ্তার করে ফেলব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ, এর আগে তারা ছোটখাট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমরা তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি।’

‘ওই নারীর স্বামীর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তার সন্ধান পাওয়া যাবে’ যোগ করেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা। 

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/এসএস/এফএ)