আদানি একা নন, দুর্নীতিতে স্ত্রী-দুই ভাই-বেয়াইসহ আত্মীয়রা, বলছে হিনডেনবার্গ

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৬

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

হিনডেনবার্গের এক রিপোর্টেই টালমাটাল আদানি সাম্রাজ্য। ভারতীয় শিল্প গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি একাই নন, ওই রিপোর্টে নাম ধরে ধরে আদানি পরিবারের আরও একাধিক সদস্যের দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা কে কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা উঠে এসেছে ১০৬ পাতার ওই রিপোর্টে।

গেল সপ্তাহে হিনডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের পর শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েন গৌতম আদানি। তার শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু হু করে নেমেছে। বিশাল ধসের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানিদের সব সংস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে ছিটকে পড়েছেন গৌতম আদানি। ভারতীয় এই ধনকুবের বর্তমানে তালিকায় ১৭ নম্বরে।

হিনডেনবার্গ রিপোর্টে বলেছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। শেয়ার বাজারে তারা কৃত্রিম ভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

গৌতম আদানি একাই নন, তার পরিবারের আরও একাধিক সদস্যও দুর্নীতিতে জড়িত। হিনডেনবার্গ রিপোর্টে নাম উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে, তারা কী কী দুর্নীতি করেছেন।

এদের মধ্যে আছে গৌতম আদানির ভাই, দাদা এবং শ্যালকসহ আত্মীয়দের অনেকেই। একাধিক দুর্নীতিতে আকণ্ঠ জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যরা। রিপোর্টে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়া সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে নাম আসে বিনোদ আদানির। পাকাপাকি ভাবে দুবাইতে থাকেন বিনোদ। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় তার নাম সবার ওপরে উঠে আসে।

হিনডেনবার্গ রিপোর্টে গৌতম আদানির আরেক ভাই রাজেশ আদানির নামও আছে। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ বেআইনি হীরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে হিনডেনবার্গ।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজেশ আদানি হীরা দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা ডিআরআই তাকে এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ এবং ২০১০ সালে দুবার তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও আছে হিনডেনবার্গের রিপোর্টে। হীরা দুর্নীতিতে রাজেশের সঙ্গে সমীরের নামও জড়িয়েছিল। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক।

হিনডেনবার্গ বলেছে, ডিআরআই সমীরকেও হিরে দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, সমীর দুর্নীতি ঢাকার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এছাড়া হিনডেনবার্গ রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। পেশায় দাঁতের চিকিৎসক প্রীতি আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান।

রিপোর্টে নাম এসেছে যতীন মেটার। তার পুত্র আদানির ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হীরা দুর্নীতির সঙ্গে যতীন মেটা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

হীরা নিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে আদানিরাই নাকি সেই দুর্নীতির কাণ্ডারি। অভিযোগ, কর ফাঁকি দিয়ে তারা হীরা এবং সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।

হিনডেনবার্গ রিপোর্টের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন তারা। দাবি করেছেন, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এমনকি হিনডেনবার্গ রিপোর্টকে ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা’ বলেও দাবি করেছে আদানি গ্রুপ।

তবে বিবৃতিতে যাই বলুক না কেন, হিনডেনবার্গের রিপোর্টের পর শেয়ার বাজারে আদানিদের ধস ঠেকানো যায়নি। ক্রমশ নেমেছে শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করেছে আদানি গোষ্ঠী।

এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কারবারে যুক্ত আদানি গোষ্ঠী। তাদের বহু কোটির শেয়ার কিনেছে এই সব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে ভারতের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/ডিএম)