কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ধানের বদলে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৪১
কিশোরগঞ্জে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বিশেষ করে জেলার হাওরাঞ্চলে অধিক পরিমাণে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। হাওর অলওয়েদার সড়ক নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে বাজারজাত করণের সুবিধা বেশি হওয়ায় ভুট্টার চাহিদাও বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় ১০ হাজার ১ শত হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ভুট্টা।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, ভুট্টা চাষ করে লাভ হয় ধান চাষের চেয়ে দুইগুণ বেশি। তাছাড়া ফসল সংগ্রহ শেষে ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে খরচ এবং বন্যার ঝুঁকি দুই বেশি। তাই জেলার কৃষকদের মধ্যে ভুট্টার চাষের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত বছর জেলায় সাত হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর নির্ধারিত ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। বন্যার আগেই ভূট্টা সংগ্রহ করা যায় ফলে এটি এখন হাওরে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। হাওর বেষ্ঠিত মিঠামইনে জেলার সবচেয়ে বেশি ভূট্টার আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, জেলার হোসেনপুরে ১৪০ হেক্টর, কিশোরগঞ্জ সদরে ৪৮০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৫১০ হেক্টর, কটিয়াদীতে ২৫০ হেক্টর, করিমগঞ্জে ২২৫ হেক্টর ,তাড়াইলে ৪৫ হেক্টর, ইটনায় ৫৭০ হেক্টর, মিঠামইনে ২৬৩৩ হেক্টর, নিকলীতে ২৫২৭ হেক্টর, অস্ট্রগ্রামে ৭২০ হেক্টর, বাজিতপুরে ১৮১০ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ১২০ হেক্টর, ভৈরবে ৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, এক একর জমিতে ভুট্টার চাষ করতে প্রায় ছয় হাজার টাকার বীজ লাগে। জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক বাবদ খরচ হয় আরও ১৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক একর জমিতে ভুট্টার চাষে খরচ হয় ৩৩ হাজার টাকা। একর প্রতি ভুট্টা পাওয়া যায় ৯০ থেকে ৯৫ মণ। গত বছর ভুট্টা বিক্রি হয়েছিল গড় ৭০০ টাকা মণ দরে। সেই হিসাবে এক একর জমির ভুট্টায় পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি একরে লাভ ২৭ থেকে ৩২ হাজার টাকা।
মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের ৮নংওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কৃষক তৌফিক মিয়া, হেলাল উদ্দিন ও জহির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার মাসে ভুট্টা ঘরে তোলা যায়। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে চলে আসে। অল্প সময়ে অধিক ফলন পাওয়া যায় এবং লাভজনক। তাই তারা ভুট্টা চাষ করছেন। গত কয়েক বছর যাবত হাওরে বোরো ধানের পরিবর্তে ভুট্টার আবাদ করছেন তারা। অগ্রিম ১ একর জমিতে ভুট্টা রেখেই ৭০-৮০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিতে চাচ্ছেন পোল্ট্রি মালিকরা কিন্ত তারা তা বিক্রি করে দেয়নি। তারা জানান আগে যেসব জমিতে ধান করতো এখন সেসব জমিতে ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে। বন্যার আগেই ভুট্টা সংগ্রহ করা যায় ফলে এটি এখন বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাওরাঞ্চলে।
মিঠামইনের চাষি মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, মহাজনের থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমাদেরকে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে লোন প্রদান করলে ভালো হতো। এতে করে ভুট্টা চাষের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ বাড়তো।
করিমগঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, আমি এবছরে ৫০ একর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। এছাড়াও ভুট্টাকে সাইলেজ করার জন্য কৃষকদের থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে ভুট্টা জমি থেকেই ক্রয় করে নেই। আমার নিজস্ব উন্নত মেশিনের মাধ্যমে সাইলেজ প্যাকেট করে বিদেশেও রপ্তানি করে থাকি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আ. সাত্তার বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও এখানে মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হতো। অথচ এই বছর দশ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আর্থিক লাভ হচ্ছে। হাওরাঞ্চলে অধিক পরিমাণে ভুট্টার আবাদ করেছেন। হাওরর অলওয়েদার সড়ক নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে বাজারজাত করণের সুবিধা বেশি। বিভিন্ন ফোল্ট্রি ফিডের মালিকরা কৃষকদের থেকে ভুট্টা ক্রয় করে নিয়ে যায়। হাওরাঞ্চলে লাকড়ির সমস্যা সমাধানে ভুট্টা অন্যতম সহায়ক। যারা গরু লালন পালন করেন তাদের গরুর খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গাছের পাতা ব্যবহার হয়। সামগ্রীকভাবে বোরো আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে চাষীরা আগ্রহী হয়ে ওঠছে। কৃষি বিভাগ ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে বলেন জানান এই অফিসার।
(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/এসএ)