রমজান ঘিরে আসছে আরও ৭৬ হাজার টন ছোলা, খাতুনগঞ্জে তৎপর ‘সিন্ডিকেট’
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:১৮

রমজানের আরও বাকি দেড় মাস। রমজানকে সামনে রেখে গত সাত মাসে আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছোলা। চলতি মাসেই আসবে আরও ৭৬ হাজার টন ছোলা। তবুও কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ছোলার বাজার। উল্টো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। দুদিনের ব্যবধানে প্রতিমণ (৩৭.৩২) ছোলায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকার বেশি। পর্যাপ্ত আমদানির পরও ছোলার বাজার অস্থিতিশীল থাকায় সিন্ডিকেটকেই দুষছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দেশের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সাধারণ মানের ছোলা ২ হাজার ৮শ ও ভালো মানের ছোলা ৩ হাজার ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুদিনের ব্যবধানে (৪ ফেব্রুয়ারি) খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সাধারণ ছোলা ২ হাজার ৯৮৫ ও ভালো মানের ছোলা ৩ হাজার ২৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২১ সালে রোজার মাসে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। ২০২২ সালে কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৪-৭৫ টাকায়। আর এবার রোজার দেড় মাস আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
গত সপ্তাহে সাধারণ ছোলা ৭৮ ও ভালো মানেরটা ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল কেজিতে দুই টাকা বেড়ে সাধারণ ছোলা ৮০ ও ভালো মানেরটা ৮৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণত প্রতিবছর রোজায় গড়ে ৭০ হাজার টন ছোলা চাহিদা থাকে। অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত সাত মাসে প্রায় ৯৭ হাজার টন ছোলা ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়। এরমধ্যে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয়মাসে প্রায় ৫৪ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। আর গত সপ্তাহে আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার টন ছোলা।
পাশাপাশি বাংলাদশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ তিনমাসে সাড়ে ৭৫ হাজার টন ছোলা আমদানি করতে ঋণপত্র খোলা হয়েছে। ঋণপত্র খোলার পর চট্টগ্রামে পণ্য আসতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। চলতি মাসের মধ্যেই ছোলা ভর্তি জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছার কথা রয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে ছোলার দাম। বর্তমানে ভারতীয় ছোলা ৬৮০ ডলার ও অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৫৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পর্যাপ্ত আমদানি থাকার সওে¦ও কোনোভাবে খাতুনগঞ্জে ছোলার বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে অনেকেই ছোলা আমদানি করতে পারছেন না। তার উপর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আসলেও তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই বাজারে পণ্যটির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে চাহিদা থাকায় ছোলার দাম বাড়তি।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স তৈয়বীয়া ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার ছোলার দাম বাড়তি। এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বুকিং রেট কমেছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে গত দুই মাস আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারেননি। তাই সরবরাহ কম থাকায় ছোলার দামটা বাড়তি।
নগরের আগ্রাবাদের বাসিন্দা মো. আবছার ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রতিবছর রোজার কয়েকমাস আগে থেকে চাল, ডাল, চিনি, ছোলা, খেঁজুর এসব পণ্যগুলোর দাম নানা অজুহাতে বাড়ানো হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা গণমাধ্যমে দেখছি পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবুও পণ্যের দাম কমছে না। এটা স্পষ্ট যে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কাজেই এখন থেকে অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। না হয় দিনশেষে বাড়তি দামের খেসারত সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং দর কম। তার ওপর বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতেও ছোলার পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। তাহলে তো ছোলার দাম কমার কথা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজানের সময় ব্যবসায়ীরা নিজেই যতটা সম্ভব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের দেশে রমজানের কয়েকমাস আগে থেকে কিভাবে ডাল, ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো যায় সে অজুহাত খুঁজতে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কাজেই ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে কিনা তা এখন থেকেই নজরদারিতে রাখতে হবে। অন্যথায় ভোক্তারাই ভোগান্তিতে পড়বে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, আমরা কিন্তু ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করি। তবে চট্টগ্রামের এই বিশাল জনসংখ্যার বিপরীতে আমাদের লোকবল সীমিত। তবুও আমরা রীতিমত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। ভোক্তার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা প্রতারণার শিকার হলে আমাদের কাছে যেন অভিযোগ করে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/এআর)