গমের বদলে খাদ্যগুদামে এলো ২৮ বস্তা বালু, তদন্তে কমিটি

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪৫ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪৮

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে ছয়টি ট্রাক থেকে নামল গমের বদলে ২৮ বস্তা বালু, কংক্রিট ও ইট। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা খাদ্য বিভাগে রীতিমতো হইচই শুরু হয়েছে। সদর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও ডিসি ফুড কর্মকর্তার দেয়া তথ্যে জানা গেছে, রবিবার ভোরে খুলনা ৪ নম্বর ঘাট থেকে গম বোঝাই চারটি ট্রাক ও দুটি কার্গোভ্যানে আসা গমের ভেতর এসব বালু, কংক্রিট ও ইট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই ট্রাকসহ চালক ও হেলপারকে আটকে রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্যরা হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ, চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু। তারা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা একে এম শহিদুল হক।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ৪ নং ঘাট থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাদ্যগুদামে বিদেশ থেকে আমদানি করা তিনশ’ টন গম আসার কথা। ইতোমধ্যেই প্রথম চালানে ১০০ টন গম চুয়াডাঙ্গায় এসেছে। দ্বিতীয় চালানে রবিবার ভোরে ১০০ টন গম বোঝাই দুটি মালবাহী ট্রাক আসে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে। খুলনার ৪ নং ঘাট থেকে এসব গমের বস্তা ছয়টি ট্রাকে লোড করা হয়। ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গুলো হলো খুলনা মেট্রো-ট- ১১ -০৩ ৬৩, খুলনা মেট্রো- ট-১১-০৬-৯৯৬, খুলনা মেট্রো-ট-১১-০৭১৪, খুলনা মেট্রো- ট-১১-২২২৯, চট্র মেট্রো-ট-১-৭৮ ৯৪ ও ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৬১৭৭।

সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামে গম আনলোডের সময় একটি ট্রাকে গমের বস্তার সারিতে বালুবোঝাই সাতটি বস্তা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে জেলার খাদ্য বিভাগ। দুপুরে ট্রাকগুলো আনলোড করার সময় পাওয়া যায় একে একে বালুবোঝাই ২৮টি বস্তা। এছাড়া সিমেন্ট ও খোয়ার জমানো ছয়টি পাথর আকৃতির চাঙড় ও দুটি ইট।

সদর খাদ্যগুদামের শ্রমিক মুক্তার আলী বলেন, আমরা প্রথমে একটি ট্রাকে কয়েকটি বালুর বস্তা পাই। এরপরই আমাদের সন্দেহ হয়। ফলে প্রত্যেকটি ট্রাকেই বালুর বস্তা আছে কিনা চেক করা হয়। প্রতিটি ট্রাক থেকে কমবেশি বালুর বস্তা উদ্ধার হতে থাকে। শেষমেশ ২৮ বস্তা বালু, কংক্রিট ও ইট উদ্ধার করি আমরা।

একটি ট্রাকের (চট্ট মেট্রো ১১-৭৮৯৪) চালক রাব্বী হোসেন ও হেলপার মেহেদী হাসান বলেন, খুলনায় গমের ট্রাক লোড হওয়ার পর আমরা সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় এসেছি। ইট-পাথর বা বালু কীভাবে ট্রাকে উঠেছে তা আমরা জানি না। এ বিষয়ে কিছুই বলতেও পারব না।

সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, গমের বস্তা লোড হওয়ার পর খুলনা থেকে ব্রিজ স্কেলে ওজন শেষে চালান করে দেওয়া হয়। চালান অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় আবারও ওজনের পর বস্তা আনলোড করা হয়। এ সময় গমের পরিবর্তে ২৮টি বস্তায় বালু পাওয়া যায়। বর্তমানে গমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২৮ বস্তা গম গোপনে সরিয়ে তার বদলে বালু ভরে দিয়েছে বলে অনুমান করছি। ধারণা করছি, প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের গম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সব ট্রাক আনলোড হলে পুরো হিসাবটা মেলানো যাবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের জেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এ কে এম শহিদুল ইসলাম জানান, খুলনার সরকার এন্টারপ্রাইজ, জোনাকি এন্টারপ্রাইজ ও সানরাইজ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর গোডাউনে মোট ৩০০ টন গম পাঠানোর কথা ছিল। সেই অনুযায়ী প্রথম কিস্তির ১০০ টন গম আসে শুক্রবার। দ্বিতীয় কিস্তির ১০০ টন গম রবিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গায় আসে।কিন্তু গমের ভেতর বালুর বস্তা দেখে রীতিমতো চমকে যান এখানকার কর্মকর্তারা। এ ঘটনার ট্রাক, চালক ও হেলাপারকে নিজেদের হেফাজতে আটকে রাখা হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল হক শাহীন জানান, এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবেন- সেভাবে কাজ করা হবে। তারা সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে ট্রাক, চালক ও হেলপারকে ছাড়া হবে না। আমরা প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, গম পরিবহনের ঠিকাদার বা ড্রাইভার ও হেলপারদের যে কেউ গম নামিয়ে বালু বা পাথর তুলে দিয়েছে ট্রাকে। ঠিকাদার যদি এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/এলএ)