ওষুধে ভেজাল করলে যাবজ্জীবন, মন্ত্রিসভায় আইন অনুমোদন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৫ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাশাপাশি নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রির বিষয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এই আইনে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় ‘ওষুধ ও কসমেটিক আইন-২০২৩’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে নতুন করে কসমেটিক বিক্রির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে গত বছরের ১১ আগস্ট ঔষধ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় ওষুধ ও কসমেটিক পণ্য আমদানি, উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও বিক্রির ক্ষেত্রে এ আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে। 
তিনি বলেন, নতুন আইনে ভেজাল এবং নকল ওষুধ তৈরি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা  হয়েছে। আর নিবন্ধন ছাড়া কারখানা থেকে ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইনে কোনো ওষুধ ক্ষতিকারক হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা বাজার থেকে বাতিল করার বিধান রাখা হয়েছে। আর এই আইন অনুযায়ী ওষুধের উৎপাদন থেকে সব ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরও জানান, এখন থেকে নতুন করে প্রসাধনী উৎপাদন করতে হলে সরকারের লাইসেন্স বা অনুমোদন নিতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন ঔষধ আইনে ৩০টি অপরাধ যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। প্রস্তাবিত এই আইনে কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলেও তিনি জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আইনে মেডিক্যাল ডিভাইস ব্যবহার করার বিষয়েও নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, প্রসাধনী উৎপাদন এবং বিতরণও এই আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে। ওষুধ প্রসাধন অধিদফতর এর তদারকি করবে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নেন। ওষুধের দোকানগুলোও নির্বিচারে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের এই অপব্যবহার ঠেকাতে নতুন এ আইন ভূমিকা রাখবে। আইন অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। কেউ বিক্রি করলে তার লাইসেন্সও বাতিল হবে। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুললে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। আর এই প্রবণতার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে।
আর পশুখাদ্য, মাছ ও কৃষিতে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিতে। এটি বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় অর্ধেক। ফলে খুব সহজেই কৃষি খাদ্যের মধ্য দিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তেমনই শরীরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে। এ ছাড়া অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কারণে সামান্য জীবাণু সংক্রমণও এখন ব্যবহারকারীর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/আরকেএইচ/ইএস