তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে প্রাণহানি ২৩০০ ছাড়াল

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৪৮ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি প্রদেশে এবং প্রতিবেশী সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা যৌথভাবে ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। এখনো অসংখ্য মানুষ ধসে যাওয়া শত শত ভবনের নিচে চাপা পড়ে থাকায় মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি) জানিয়েছে, ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানে এবং এর কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারসিক জেলায়। এর ১২ ঘণ্টার পার হওয়ার আগে আরও একটি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে সব শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তুরস্কের সীমান্তের মধ্যে ১৫০০ জন এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ৮০০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে।

ভূমিকম্পের ফলে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে। একেকটা ভবন পরিণত হয়েছে লাশের স্তূপে। উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে বেশ কয়টি দেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনও তুরস্কে সহায়তা পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে। সাহায্য পাঠাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে ইরানও।

১৯৩৯ সালের এরজিনকান ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পটিকে তুরস্কের ‘সবচেয়ে বড় বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এরদোগান।

এএফএডি এক বিবৃতিতে বলেছে, ভূমিকম্পের পর ৭৮টি আফটারশক হয়েছে।

গাজিয়ানটেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় এবং কিলিস প্রদেশগুলি ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অনুসারে রাষ্ট্রপতি আদানা, ওসমানিয়ে, হাতায় এবং কিলিসের মেয়রদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন।

এরদোগান বলেন, ধসে পড়া ভবনের সংখ্যা ২ হাজার ৮১৮টি।

ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ভূমিকম্পের মুহূর্ত থেকেই এরদোগান অনুষ্ঠানটি অনুসরণ ও পরিচালনা করছেন। এরদোগান বর্তমানে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের সমন্বয় করতে রাজধানী আঙ্কারার এএফএডি অফিসে রয়েছেন।

ওকতায় যোগ করেছেন যে হাতায় বিমানবন্দর বর্তমানে ফ্লাইটের জন্য বন্ধ রয়েছে, তারা বলেছে যে তারা কাহরামানমারাস এবং গাজিয়ানটেপ থেকে সিভিল ফ্লাইটগুলিও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০২টি মোবাইল বেস স্টেশন ভূমিকম্প অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।

তিনি ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য সমস্ত মিডিয়া সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলিকে অফিসিয়াল বিবৃতির ওপর নির্ভর করার আহ্বান জানান।

ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এই ১০টি প্রদেশের সমস্ত স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় শিক্ষামন্ত্রী মাহমুদ ওজার বলেছেন, দিয়ারবাকির, গাজিয়ানটেপ, সানলিউরফা, আদানা, ওসমানিয়ে এবং কিলিস প্রদেশের স্কুলগুলি এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে।

ওজার বলেন, ‘আজ থেকে, আমরা কাহরামানমারাস, হাতায়, আদিয়ামান এবং মালতায়া প্রদেশে শিক্ষা থেকে দুই সপ্তাহের বিরতি নিচ্ছি।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী মেহমেত কাসাপোগলু বলেছেন যে তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য সমস্ত জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। লেবানন ও সিরিয়াসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

তুরস্কের একটি শহরের উদ্ধার তৎপরতার দৃশ্য তুলে ধরে বিবিসি লিখেছে, উদ্ধারযজ্ঞ চলার সময় আকস্মিকভাবে জনতা উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন। তাদের হাততালি দিতেও দেখা যাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে কারও কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে লোকজন চিৎকার করছেন।

তবে যাকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তার কোনও আত্মীয় নন এই হাততালি দেওয়া লোকজন। তবে কেউ যে উদ্ধার হচ্ছে, তাতেই তারা খুশি। সেখানকার পরিস্থিতিতে বর্ণনায় বিবিসি বলছে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে নেমে আসছে পিন-পতন নীরবতা। কারণ যাকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন।

সিরিয়ার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পে সেদেশে অন্তত ৭৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে আলেপ্পো, হামা, লাতাকিয়া ও তারতুসের মতো শহরগুলো। সিরিয়াতেও এখনো অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। তাই হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

কারণ বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। এসব মানুষের বেশির ভাগই ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের অভিযান চলছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুতিনের

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় সমবেদনা ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

পুতিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে বলেছেন, আমরা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে পাঠানো এক বার্তায় পুতিন নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ ও পাশে থাকার কথা বলেছেন।

এদিকে ইসরায়েল তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধার ও মেডিকেল টিম পাঠাবে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এসএটি)