মিলন হয়নি অথচ তরুণী নাকি গর্ভবতী!

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১৪ | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৮

যৌনতা মানেই নিষিদ্ধ ব্যাপার, এই বেড়াজাল কাটিয়ে ধীরে হলেও বের হচ্ছে মনুষ্যজাতি! মানতে শিখছে যৌনতায় অস্বাভাবিক কিছুই নেই! এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি আদিম- জৈবিক প্রবৃত্তি!

যৌনতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে কেউ তাদের সন্তানদের ঠকিয়ে সুযোগ নিতে পারবে না! যৌনতা নিয়ে অনেক বাবা-মাই সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বস্তিবোধ করেন! অনেকেই যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা সঠিক সময়ে নিতে পারেন না। সম্প্রতি এক মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার জীবনের একটি ঘটনা শেয়ার করেছেন, যা ফের একবার বুঝিয়ে দিচ্ছে, সেক্স-এডুকেশন কতটা জরুরি!

কেটি নামে এক মহিলার বয়স ২৭। তিনি জানান, তখন তার ১৭ বছর বয়স, স্কুলেরই একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম করছিলেন! কেটির একদিন মনে হয় সে গর্ভবতী। তার পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরেও হচ্ছে না। সদ্য ছেলেটার সঙ্গে তার ব্রেক-আপ হয়েছে! তাই কেটি তার সমস্যার কথা সেই ছেলেটিকেও বলতে পারছিল না! সত্যিই গর্ভবতী কি না জানতে 'প্রেগন্যান্সি কিট' কিনে এনে বাড়িতেও পরীক্ষা করল কেটি, পরীক্ষার ফল পজিটিভ এল! কিন্তু বরাবর কেটির মাথায় যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, তা হল, সে তো ছেলেটির সঙ্গে কখনও সঙ্গম করেনি! তা হলে কীভাবে প্রেগন্যান্ট হল?

পরমুহূর্তেই প্রেগন্যান্সি কিট-এর ফল দেখে ভাবল, কিট-এ যখন দুটো দাগ দেখাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই সে প্রেগন্যান্ট! ভয়ে তো কেটির জবুথবু অবস্থা! কী করবে? কাকে বলবে? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে একসময় কেটি নিজের মাকেই সবটা খুলে বলল! সঙ্গে এও জানাল, সে আর তার প্রাক্তন প্রেমিকের মধ্যে কখনও সঙ্গম হয়নি। কিন্তু কেটির মনে হয় সে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েছে!

সবটা শুনে মা 'প্রেগন্যান্সি কিট'-টা দেখতে চাইলেন! কেটি দেখাল, আর সেটা দেখেই মা আর হাসি থামাতে পারেন না! কেটি যেটিকে 'প্রেগন্যান্সি টেস্ট' -এর কিট বলে পরীক্ষা করেছিল, সেটি আসলে ওভিউলেশন টেস্ট কিট। সেই সময় কেটির ওভিউলেশন বা ডিম্বস্ফোটনের সময় চলছিল, তাই কিট-এর টেস্ট-এ দুটো দাগ দেখা গিয়েছিল, যা পজিটিভ-এর চিহ্ন।

চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় প্রথম যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণটি দেখা যায় তা হল পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ উপস্থিত থাকতে পারে। যেমন: মাথা ঘুরানো, চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা, বমি বমি লাগা, ক্লান্তি অনুভব করা। তবে এসব লক্ষণ থাকলেই যে আপনি গর্ভবতী তা সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ১ মাস মায়েরা সাধারণত বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। প্রথম যে লক্ষণটি গর্ভবতী মায়েরা খেয়াল করে তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া। উল্লেখ্য, গর্ভবতী নারীর সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার গর্ভকালের শুরু ধরা হয়।

বাসায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য আপনার নিকটস্থ ফার্মেসি বা সুপারশপ থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/বক্স কিনে নিন। দিনের যেকোনো সময়ের প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/স্টিকের উপর প্রস্রাব করার পর সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেখায়। একেকটি টেস্ট কিটের ধরন একেকরকম, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই বক্সের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী ভালোমতো পড়ে নিবেন।

চিকিৎসকদের মতে, মাসিক চক্র বা ঋতু চক্র একজন মহিলার জীবনের অখণ্ড অঙ্গ। এর সঙ্গে একজন মহিলার প্রজনন ক্ষমতা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। একটি মাসিক চক্র সাধারণ ভাবে ২৮ দিনের হয়। তবে, কিছু মহিলার ক্ষেত্রে তা ৩৫ দিনেরও হতে পারে। প্রত্যেক মহিলার জন্য এই চক্র আলাদা। সাধারণত, ঋতুস্রাবের প্রথম দিন থেকে গুনলে ১১ থেকে ১৪-তম দিনের মধ্যেকার সময়কেই গর্ভবতী হওয়ার আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়।

মাসিক চক্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা একজন মহিলার গর্ভবতী হওয়ার বয়স নির্ধারণ করে। সাধারণ মাসিক চক্রে জরায়ুর অন্তর্বর্তী লাইনিং ভ্রূণকে ধারন করার জন্য মোটা হতে থাকে। ভ্রূণের অনুপস্থিতিতে এই লাইনিং ভেঙে যায় এবং ঋতুস্রাব হয়। আপনি ঋতুস্রাবের কতদিন পর গর্ভবতী হবেন, তা আপনার মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করছে। সাধারণত, যেসব মহিলার ২৮ দিনে মাসিক চক্র সম্পূর্ণ হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে ১৪-তম দিনে ডিম্বস্ফোটন হয়।

ডিম্বস্ফোটনের সময় ডিম্বাশয় একটি পরিণত ডিম রিলিজ করে। এই ডিমটি ফ্যালোপিয়ান টিউবে অপেক্ষা করে স্পার্মের জন্য, এবং এরা মিলিত হলে আপনি খুব শীঘ্রই গর্ভবতী হতে পারেন। একটি স্পার্ম যেখানে মহিলার ডিম্বাশয়ে ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে, সেখানে একটি মহিলার ডিম্ব মাত্র ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।

এই সময়ের মধ্যে আপনার ডিম স্পার্মের সাথে মিলিত হতে পারলে আপনার গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ডিম্বস্ফোটন হবার পরে গর্ভবতী হতে চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তবে তার আগে চেষ্টা করলে ফল পেতে পারেন। তাই, ঋতুস্রাবের পর ১২ থেকে ১৬-তম দিনের অন্তর্বর্তী সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময়ের মধ্যে অরক্ষিত যৌনসঙ্গম আপনাকে খুব সহজেই গর্ভবতী করে তুলতে পারে।

ডিম্বস্ফোটনের কিছু নির্দিষ্ট সংকেত আছে যা থেকে বোঝা যায় যে আপনার শরীর এই সময়ে সব থেকে উর্বর। এই সময়ে আপনি তলপেটে ফোলা ভাব অনুভব করতে পারেন, পেটের একদিকে যন্ত্রণা ও ঘ্রাণশক্তির আকস্মিক বৃদ্ধি অনুভব করতে পারেন।

এছাড়াও এই সময়ে সার্ভিকাল শ্লেষ্মা অত্যধিক পরিমাণে তৈরী হতে পারে, যা অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মতো দেখতে। এই লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বুঝবেন যে ডিম্বস্ফোটনের দিন উপস্থিত এবং এই সময়ে আপনি গর্ভবতী হতে চেষ্টা করতে পারেন।

নিজস্ব আদর্শ উর্বর সময় নির্ধারণ করার জন্য নিজের মাসিক চক্রের হিসাব রাখা খুব ভালো একটি উপায় (৮ বা তার বেশী মাসের জন্য, যদি সম্ভব হয়)। আপনার সবথেকে ছোট চক্রটিকে শনাক্ত করুন (ধরুন ২৭ দিন) ও সেখান থেকে ১৮ বিয়োগ করুন।যা উত্তর পেলেন – এক্ষেত্রে ৯ – তা হল আপনার প্রথম উর্বর দিন। আপনার দীর্ঘতম চক্র (ধরুন ৩০ দিন) থেকে ১১ বাদ দিন, তাহলে পাবেন ১৯। এটি আপনার শেষ উর্বর দিন। একাধিক মাস ধরে গণনা করা চক্র যদি ২৭ এবং ৩০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তাহলে ৯ থেকে ১৯-তম দিনের মধ্যে আপনি সব থেকে উর্বর।

ঢাকাটাইমস/০৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :