আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে ফ্ল্যাটের ব্যবসা, দোকান

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৪ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রথমে বসুন্ধরা সিটিতে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে জেমস্ সুপারশপ নামে পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরও কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে আরও চারটি দোকান ভাড়া করে বিভিন্ন ব্যবসাসহ ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ জালিয়াতি ও চেক জালিয়াতি মামলায় ২০২০ সালে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এতে রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গাঢাকা দিয়ে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতিসহ তার স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে রয়েছে একাধিক মামলা। কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় দেওয়া হয় যাবজ্জীবন সাজা। অবশেষে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে মো. হাসান ছালাম নামে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, হাসান ছালাম ঢাকা ও কুমিল্লায় জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেডসহ যৌথ মালিকানাধীন মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। এতে ভালো মুনাফা হওয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেন। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। পাওনাদারেরা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে সে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক দিলেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায় না এবং  চেক ডিজঅনার করে দেয় ব্যাংক। পাওনাদারেরা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি দিতেন তিনি। এতে তারা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন।

ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও টাকা নেওয়ার কথা জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক। তিনি জানান, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেন হাসান। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দেয়। পরে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপের দায়ে মামলা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। মামলাগুলোর শুনানিতে হাজিরাও দেননি তিনি। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি কেনেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গাঢাকা দেন এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

বসুন্ধরা সিটির জেমস্ সুপারশপে পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন হাসান ছালাম। পরে গিয়াস উদ্দিন প্রতি মাসে লাভের টাকা চাইলে হাসান বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে থাকেন। এরপর মূলধন ফেরত চান গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু হাসান মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এতে হাসানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে গিয়াস উদ্দিন। ২০২২ সালে হাসান ছালামকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

ব্যক্তিগত জীবনে হাসান ছালাম তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে তিনি আলাদা বসবাস করছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭ফেব্রুয়ারি/এসএস/এফএ)