জাবির মদবাহী সেই অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ আহত ৪, মৃত সন্তান প্রসব

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২৩

জাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গত ২৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে মদ আনার সময় অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় অটোরিকশাচালক মারা যাওয়ার ঘটনায় অন্তঃস্বত্ত্বা নারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছি সেই দুর্ঘটনায় মূলত আহত হয়েছেন চারজন। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। দুর্ঘটনার চারদিন পর অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভ থেকে বের করা হয়েছে মৃত সন্তান। 

এসব তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে সাভার থানার কর্মরত পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ‍বিরুদ্ধে।

সমবার পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে একজন নিহত ও একজন আহতের খবর পাওয়া গেলেও মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হন অন্তঃস্বত্তা নারীর ছোটভাই ফরহাদ হোসেন। রাত ৮টায় তিনি জানান, গত ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় একজন অটোরিকশাচালক নিহত হন। ওই রিকশার একই পরিবারের আরও চারজন যাত্রী ছিলেন। তাঁরা হলেন কাকলি আক্তার (২৬), তাঁর স্বামী সবুজ আহমেদ (৩০), তাঁদের ২৬ মাসের শিশুসন্তান শোয়াইব এবং কাকলির ভাতিজি ১৪ বছরের জান্নাত। তাঁদের মধ্যে কাকলি চার মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। তাঁরা সবাই সাভারের কলমার দোসাইদ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

ফরহাদ হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাকলি আক্তার সাভারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপ শেষ করে অটোরিকশাযোগে দোসাইদে তাদের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনের ইউটার্নে মোড় নিয়ে কলমার সড়কে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সটি ওই রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় রিকশায় থাকা সবাই ছিটকে পড়ে যান। পরে সেখানেই রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস (৩০) মারা যান।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আহত চারজনকে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। জান্নাত ও শোয়াইবকে দুদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ২৮ জানুয়ারি কাকলি আক্তার ও সবুজ আহমেদকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরদিন (২৯ জানুয়ারি) কাকলি আক্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সবুজ আহমেদকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেলে কাকলির গর্ভ থেকে মৃত সন্তান বের করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে সবুজ আহমেদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর একদিনের বেশি সময় আমার জ্ঞান ছিলো না। আমার দুই পায়ে রিং পড়ানো হয়েছে। দুইমাস এ অবস্থায় থাকার পর আমার অপারেশন করা হবে বলে ডাক্তারেরা জানিয়েছে।’ তাঁর স্ত্রী কাকলি আক্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁর গর্ভের সন্তান মারা তো গেছেই, তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত হয়েছে এবং পা-ও ভেঙ্গে গেছে।’

পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শেষ করে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সাভার মডেল থানায় যোগাযোগ করি। আমরা মামলার করার কথা বললে পুলিশ জানায়, তাঁরা বাদী হয়ে ইতিমধ্যে একটি মামলা করেছে। পরে মামলার বাদী সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রাসেল মাহমুদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করি। তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক বাবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।’ এরপর ফরহাদ একটি মামলা করার কথা জানালে বাবুল তাঁকে মামলা না করার পরামর্শ দেন।

এরপর সোমবার রাত নয়টার দিকে বাবুল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন ফরহাদ। এ সময় বাবুল দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত অ্যাম্বুলেন্সের কোন সন্ধান পাননি বলে ফরহাদকে জানান। ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও আমরা কোন তথ্য পাইনি। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করার কথা জানালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। আমরা পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি জানতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছে এবং মামলা করতে চাইলে তাঁরা অসহযোগিতা করেছেন।’ এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, ‘ভিক্টিমরা আসছিলো কিছুক্ষণ আগে, উনারা হয়তো বুঝেন না যে এক ঘটনায় দুই মামলা হয়না। তাদেরকে অসহযোগিকতা করা হয়নি,আমরা সবসময় ভিক্টিমদের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/এআর)