আখাউড়ায় বসতবাড়ি ঘেঁষে রেললাইন স্থাপন, উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৩ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৬

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বসতঘর থেকে মাত্র ৭-৮ ফুট দূরে রেললাইন বসানো হয়েছে। রেলওয়ের ভূমির সীমানা খুঁটির পাশেই ব্যক্তি মালিকানার ১০-১৫টি আধা-পাকা বসতবাড়ি। এসব বাড়িতে শতাধিক মানুষ বসবাস করে। বসতবাড়ি ঘেঁষে রেললাইন বসানোর কারণে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্ক দেখা দিয়েছে।

 

এছাড়া রেলওয়ের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভারী যন্ত্রপাতির ভাইব্রেশনের ঝাঁকুনি লাগছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিল্ডিংয়ে। বিল্ডিংয়ের কয়েকটি স্থানে ফাটলও দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহারজনিত ঝাঁকুনির কারণে স্থাপনা ভেঙে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এসব উদ্বেগের কথা জানিয়ে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্প পরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি ডাকযোগে আবেদনটি পাঠানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ বোরহান উদ্দিনসহ ১১ জন আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। আবেদনের একটি কপি আখাউড়া-লাকসাম ডাবল রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) মো. আব্দুল্লাহর কাছে দেওয়া হয়েছে।

 

লিখিত আবেদন  ও সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর অংশ হিসেবে স্টেশনের দক্ষিণে পৌরশহরের চন্দনসার এবং দেবগ্রাম মৌজায় ভূমি অধিগ্রহণ করে নতুন নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। রেলওয়ে ভূমির পশ্চিম সীমানায় বসত বাড়ি ঘেঁষে রেললাইন বসানো হয়েছে। রেললাইনের পাশেই বেশ কিছু আধা-পাকা বাড়িঘর ও একটি মসজিদ রয়েছে। এসব বাড়িঘরে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ বসবাস করে। এছাড়া পূর্ব দিকেও রেললাইনের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। ট্রেন চলাচলকালে শব্দ দূষণের পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এতে প্রাণহানিসহ মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিরাপদ দূরত্বে রেললাইন বসানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

রেললাইনের পাশেই লেখক মোহাম্মদ আলীর বাসা। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে তার পৈতৃক বাড়িটি অধিগ্রহণ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি পাশেই জায়গা কিনে নতুন করে দুতলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। রেলের ভারী যন্ত্রপাতির ঝাঁকুতিতে মোহাম্মদ আলীর ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোহাম্মদ আলী  অভিযোগ করে বলেন, ভারী যন্ত্রপাতির অতিরিক্ত ব্যবহারের ঝাঁকুনিতে আমার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ উজ্জল বলেন, রেল একবার আমাদের বাড়ি অধিগ্রহণ করেছেন। আমরা সামান্য জায়গায় কোনো রকমে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। আমাদের ঘরের সঙ্গে রেললাইন স্থাপন করেছে। কোনো জায়গাই রাখেনি রেল। ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের  ঘরে এসে পড়বে। এজন্য আমরা আতঙ্কে আছি।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ বোরহান উদ্দিন বলেন, যেভাবে বাড়িঘর ঘেঁষে রেললাইন বসানো হয়েছে কোনো কারণে যদি রেল দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে উদ্ধার কাজ করার মতো রেলের জায়গা নাই। জনগণের সার্বিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে রেললাইন স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আগেও জায়গা দিয়েছি প্রয়োজনে আরও দিব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া-লাকসাম ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ার্কস) মো. আব্দুল্লাহ বলেন এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ওই লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে না। শুধু ট্রেন সানটিং করবে। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা নাই। রেলের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রজেক্টের কস্ট (খরচ) লিমিটের মধ্যে রাখার জন্য কোনো কোনো জায়গায় সীমানায় কাজ করা হয়েছে। এটা ডিজাইন পেজে যারা কাজ করেছে তাদের বিষয়।

 

(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/এআর)