পায়ে লিখে এইচএসসি পাস করা নগরকান্দার সেই জসিমের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০০

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

পা দিয়ে উত্তরপত্র লিখে এইচএসসি পাস করা ফরিদপুরের নগরকান্দার সেই হাতবিহীন জসিম মাতুব্বরের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন ইউএনও মো. মঈনুল হক।

বুধবার ফলাফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জসিমকে নগদ ৬০ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা দিয়ে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। জসিম এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য শাখা থেকে জিপিএ ৪.২৯ পেয়ে পাস করেন। তার এ সাফল্যে পরিবারের মধ্যে বইছে আনন্দ জোয়ার।

প্রতিবন্দ্বী জসিম উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের দিনমজুর মো. হানিফ মাতুব্বর ও গৃহিণী তছিরন বেগম দম্পতির ছেলে। জন্মের পর থেকে জসিমের দুটি হাত না থাকলেও জীবনসংগ্রামে কখনো থেমে থাকেনি তিনি। পা দিয়েই হাতের যাবতীয় কাজ করে নজির সৃষ্টি করেছেন সে। পাশাপশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে অদম্য এ মেধাবী। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে যেন সবকিছু হার মেনেছে।

জীবনসংগ্রামী জসিম মাতুব্বর বলেন, পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করার খবর পেয়ে ইউএনও স্যার আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে শিক্ষা সহায়তা হিসেবে আমাকে নগদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে পেঁয়াজের জমি বন্ধক রাখবো। সেই জমিতে সফল ফলিয়ে যা আয় হবে, তা দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাবো। এ ছাড়া সে আমার পড়ালেখার অন্যান্য খরচও দিতে চেয়েছেন। এটা আমার জন্য পরম পাওয়া।

জসিম আরো বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে নগরকান্দা বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মনা টেলিকমে মোবাইল সার্ভিসিং কাজ করি। দুই হাত না থাকা সত্তে¡ও দোকানের মালিক সোহাগ ভাই আমাকে কাজ শিখিয়েছেন। আমি পুরোপুরি কাজ শিখে নিজে আয় করতে পারছি। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই। আমার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পড়ার অনেক ইচ্ছা। আমি যাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি হতে পারি সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।

মনা টেলিকমের মালিক সোহাগ বলেন, প্রতিবন্দ্বী জসিমকে দেখে প্রথমে আমার অনেক মায়া লাগছিল। পরে তাকে আমার দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে বলি। এতে সে রাজি হলে তাকে আমি কাজ শিখিয়ে দেই। বর্তমানে জসিম পা দিয়েই দক্ষতার সাথে মোবাইল সার্ভিসিং কাজ করে। পাশাপাশি কম্পিউটারের কিছু কাজও পারে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছে। জসিমের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ায় ইউএনওকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার বাবা-মা।   

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, অদম্য মেধাবী জসিমের এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার গল্প আমি সংবাদ মাধ্যমে শুনে আমি তাকে অফিসে ডেকে এনে ফুলে শুভেচ্ছা জানিয়েছি, মিষ্টি খাইয়েছি। আর্থিক অভাবের কারণে এই মেধাবীর উচ্চশিক্ষা যাতে থমকে না যায়, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এককালীন আর্থিক শিক্ষা সহায়তা দিয়েছি। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে মাসিক যে খরচ হবে, সেটা উপজেলা প্রশাসন বহন করবে। 

(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/এআর)