বিবিসি ভারতের কার্যালয়গুলোতে আয়কর কর্তৃপক্ষের অভিযান

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:২৮ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে নির্মিত একটি সমালোচনামূলক তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর বিবিসি ভারতের অফিসগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে দেশটির আয়কর কর্তৃপক্ষ। একটি তদন্তের অংশ হিসেবে তারা এই অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিবিসির নয়া দিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে এই তল্লাশির ঘটনা ঘটেছে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০২ সালে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা ঘিরে ওই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। তল্লাশির পর বিবিসি জানিয়েছে, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করছে।

সংক্ষিপ্ত একটি বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, ‘আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতির সমাধান হয়ে যাবে।’

‘ইন্ডিয়া: দি মোদী কোয়েশ্চেন’ নামের তথ্যচিত্রটি শুধু যুক্তরাজ্যের টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হলেও ভারতে সেটির অনলাইনে প্রচার বা শেয়ারিং বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। ভারত সরকারের বক্তব্য, তথ্যচিত্রটি ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতায়’ তৈরি ‘ভারত-বিরোধী প্রোপাগান্ডা ও আবর্জনা’ দিয়ে ভর্তি।

এমনকি গত মাসে ওই তথ্যচিত্রটি দেখার জন্য জড়ো হওয়া একদল শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল দিল্লির পুলিশ। বিরোধী কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন, মঙ্গলবারের এই তল্লাশি ‘হতাশা তৈরি করছে এবং মোদী সরকার যে সমালোচনাকে ভয় পায়, সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি টুইটারে বলেন, ‘আমরা এই ভয় দেখানোর কৌশলকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। এই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে পারে না।’

মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির একজন মুখপাত্র গৌরভ ভাটিয়া বিবিসিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত এমন একটি দেশ যা সব সংস্থাকেই সুযোগ দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিষ ছড়ায়।’

বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল মোদী কীভাবে রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টিতে কীভাবে ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠে পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিবিসির সংগ্রহ করা একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল, যেখানে ধর্মীয় দাঙ্গা চলার সময় মোদীর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

মূলত হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি রেলে অগ্নিকাণ্ডে অনেকে নিহত হওয়ার পর ওই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। ঘটনার জেরে কয়েকদিনের সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় যাদের বেশিরভাগ ছিলেন মুসলমান।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মোদী সেই সময় ‘দায়মুক্তির পরিবেশ’ তৈরি করার জন্য ‘সরাসরি দায়ী’ ছিলেন, যা সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছিল। তখনকার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্রর নির্দেশে করা একটি তদন্তের অংশ হিসেবে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সহিংসতা মাত্রা প্রকাশিত খবরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল’ এবং ‘দাঙ্গার লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকাগুলো থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা’।

মোদী দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং দাঙ্গার জন্য কখনো ক্ষমা চাননি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলও বলেছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত মাসে বিবিসি বলেছে, ভারতের সরকারের কাছে তথ্যচিত্রে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সেখানে ‘নিরলস গবেষণা করা হয়েছে’ এবং ‘অনেকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিজেপির লোকজনের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।’

এই তল্লাশির ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের এডিটরস গিল্ড। এডিটরস গিল্ড বলেছে, এসব ‘সরকারি নীতি বা সংস্থাগুলোর সমালোচনাকারী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার অব্যাহত প্রবণতার অংশ।’

গত মাসে পার্লামেন্টে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে তথ্যচিত্রের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমরা নির্যাতনকে সমর্থন করি না। তবে যেভাবে মোদীর ‘চরিত্রায়ন করা হয়েছে’ তার সঙ্গে একমত নই।’

ভারতে সরকারের সমালোচনাকারী বিভিন্ন সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ সালে ভারতে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছিল, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘উইচ-হান্ট’ বা প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ভারতের সরকার। বেসরকারি আরও কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি গত বছর অক্সফামেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এসএটি)