এখন বাংলায় পড়া যায় ইংরেজি রায়

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলা ভাষার জন্য কতশত লড়াই, আত্মত্যাগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে জীবন বিসর্জন। অতপর মাতৃভাষায় কথা বলার, দাপ্তরিক কাজে মাতৃভাষা ব্যবহারের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে বাঙালি। তবে এখনও দেশের উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এই রায় বাংলায় লেখার দাবি তুলে আসছেন বিশিষ্টজনরা। তবে বিশ্বে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এক দেশের সর্বোচ্চ আদলতের রায় অন্য দেশগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। সে কারণে এ রায় ইংরেজিতে লেখার গুরুত্ব থাকায় বিষয়টি নিয়ে চলতে থাকে ভাবনা-চিন্তা। 

এক পর্যায়ে এর সমাধান ঘটালেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল বিকাল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টে তিনি উদ্বোধন করলেন এক প্রযুক্তি সেবা। যার মাধ্যমে এখন থেকে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সকল রায়-আদেশ বাংলায় পড়া যাবে।

এর ফলে গতকাল থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সব রায়-আদেশ গুগলের প্রযুক্তির সহায়তায় আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বা যে কোনো ব্যক্তি নিজে নিজেই বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারছেন। 

এই জনমুখী প্রযুক্তি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত যেকোনো রায় বা আদেশ, তা যত বড়ই হোক না কেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারবেন। 

এদিকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সকল রায়-আদেশ বাংলা ভাষায় দেখার এক যুগান্তকারী সুযোগ সৃষ্টিতে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সকল রায়-আদেশ বাংলায় দেখতে এক প্রযুক্তিসেবা সংযোজন করা হয়েছে।

এই প্রযুক্তিসেবা সংযোজনের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সকল রায়-আদেশ গুগলের প্রযুক্তির সহায়তায় আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বা যে কোনো ব্যক্তি নিজে নিজেই বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারবেন। এই জনমুখী প্রযুক্তি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এমনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত যে কোনো রায় বা আদেশ, তা যত বড়ই হোক না কেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তা বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিচারপতি নিয়মিতভাবে বাংলা ভাষায় রায়-আদেশ প্রদান করে থাকেন বলেও জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। 

এ ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পরিচালিত ‘আমার ভাষা’ নামক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায়-আদেশ বাংলায় অনুবাদ করা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। 

তবে গতকাল উদ্বোধন করা এই প্রযুক্তির সংযোজন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদের এই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা একদিকে যেমন বিচারপ্রার্থী এবং সাধারণ জনগণের কাছে আদালতের রায়গুলো আরও সহজবোধ্য করে তুলবে, অন্যদিকে তেমন দেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচারে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই অনুবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং আইন ব্যবস্থার মধ্যে ব্যবধান দূর করতেও ভুমিকা রাখবে।

এই প্রযুক্তিগত সেবা উদ্বোধনের সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোছাইনসহ সুপ্রিম কোর্টের ‘কোর্ট-প্রযুক্তি কমিটি’র সদস্য এম এম মোশেদ, আব্দুল মালেক এবং মইনউদ্দিন কাদের উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অবশ্য গত বছর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলা ভাষার ব্যবহার বেড়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায়ও দিয়েছেন। মাঝে মাঝেই বাংলায় আবেদন দাখিল করছেন কোনো কোনো আইনজীবী। শুনানিতেও বাংলার ব্যবহার বেশি। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাই কোর্ট) বিভাগের বিচারপতিদের দেওয়া ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল প্রায় ১০০টি ইংরেজি রায় বাংলায় রূপান্তর করেছে। 

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)