ডায়াবেটিস নিরাময়ে কার্যকরী শুকনা আদার গুঁড়া

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১১ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৫

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

প্রাচীনকাল থেকেই আদা ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রান্নাঘরের সহজলভ্য একটি উপাদান আদা। সুস্বাদু খাবারের মসলা হিসেবেও এর জুড়ি নেই। আয়ুর্বেদিক ভেষজ আদার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপারের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি শক্তি, ফাইবার, প্রোটিনের মতো অনেক পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও আদা হল ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস।

আদা শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি। মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা।

গলা খুশখুশ কমাতেও উপকারী আদা। ঠান্ডা লেগে কাশি হলেও আদা গলা স্বাভাবিক রাখতে কাজে লাগে।আদা আপনাকে খুশখুশে কাশি ও ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে সহজেই রক্ষা দিতে পারে আদা। আদার রস ঠাণ্ডা-কাশি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। চায়ের সঙ্গে পুদিনা পাতা ও মধুর সঙ্গে আদার রস মাথাব্যথা ও ঠাণ্ডা-কাশি নিরাময়ে খুবই উপযোগী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আদা পুরুষদের যৌনক্ষমতা বাড়াতে ওষুধের মতো কাজ করে। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে আদা খাওয়া উচিত। এর প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা আংশিক বৃদ্ধি পায় যা শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে।

সুস্থ যৌনজীবন বজায় রাখতেও অপরিহার্য্য হতে পারে আদা। আদার মধ্যে থাকা ভোলাটাইল অয়েল স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়ায় ও রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা ঠিক রাখে। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কম টেস্টোস্টেরন যৌন প্রভাবিত করতে পারে। আদা ও মধুর মিশ্রণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করতে পারে, রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং রক্তের প্রবাহ বাড়াতে পারে।

প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞানেও আদার স্থান অনেকটা উপরে। শরীর সুস্থ রাখতে আদা খেতেই পারেন। রান্না বা সর্দি-কাশি বা জ্বরের সমস্যায় কাঁচা আদাই ব্যবহার করা হয়। তবে শুকনা আদা বা আদার গুঁড়া বেশ উপকারি। শুকনো আদাকে কেউ কেউ সুঁঠ বা সোঁঠও বলে থাকেন। আদার গুঁড়া খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

শুকনো আদা গুঁড়া উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এর মধ্যে ট্রিপসিন এবং লাইপেজ প্রোটিন রয়েছে যা ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। ব্যথা উপশমকারী বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা হিসাবেও কাজ করে এবং ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের ব্য়থা কমাতে পারে। জ্বর, সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় উপশম করে। ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। জেনে নিন শুকনা আদার গুঁড়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা-

 

রাতে ঘুম না হলে

দুধের সঙ্গে অল্প পরিমাণ আদা গুঁড়া নিয়ে নিন। ভালো করে মিশ্রণ করে খেয়ে নিন। এতে আপনার ঘুম ভালো হবে।

 

বাচ্চার সর্দি-কাশি হলে

গুড়, ঘি এবং হলুদের সঙ্গে সমপরিমাণে আদার গুঁড়া মিশিয়ে ট্যাবলেট তৈরি করে নিন। ছোট বাচ্চারা খেলে সর্দি, কাশি বা ফ্লু সমস্যা থেকে সহজে সেরে উঠবে।

 

বদহজমের সমস্যা নিরাময় করে

একটু ভাজা-ভুজি খেলে যদি বদহজম হয়, টপাটপ অ্যান্টাসিড না খেয়ে আদা গুঁড়া খেয়ে নিন। খাবার খাওয়ার আগে সামান্য আদা খেয়ে নিতে পারেন।

 

রূপচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন

আদার গুঁড়া আপনার চুল এবং ত্বকের জন্যও উপকারি বলে প্রমাণিত। এটি ত্বক ফর্সা করবে খুশকির সমস্যা দূর করবে। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই আদার গুঁড়া।

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

আদার গুঁড়া মানুষের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে ডায়াবেটিস রোগের উপশম হয়। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি এসব তথ্য দিয়েছেন। আদার গুঁড়ার নির্যাস শরীরের কোষে গ্লুকোজের শোষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে,যা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে দীর্ঘমেয়াদে সুগারের স্তর ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে এবং কোষগুলোতে নির্বিঘ্নে ইনসুলিনের চলাচল ঠিক রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।

 

ক্যানসার নিরাময় করে

আদাতে জিনজেরোল নামক শক্তিশালী ওষধি বস্তু রয়েছে যেটি বিভিন্ন রোগের  নিরামক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা যারা কেমোথেরাপির মধ্য দিয়ে যান তাদের জন্য শুকনা আদার গুঁড়া কার্যকর। প্রক্রিয়াজাত শুকনা আদার গুঁড়া অনেক ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে করে।

 

শরীরের ওজন কমায়

ওজন বা মেদ কমাতে প্রক্রিয়াজাত শুকনা আদার গুঁড়া (যাতে লেবুর রসও থাকে) সেবন করলে দ্রুত এর ফল উপলদ্ধি করা যায়। তবে তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত শুকনা আদার গুঁড়া সেবনে হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রাচীন কাল থেকেই পেটে ব্যথা, বদ হজমের জন্য আদার রসের প্রচলন রয়েছে। নানা প্রকার হজমজনিত সমস্যায় এটি প্রাকৃতিকভাবে উপসর্গ নিরাময় করে। এটি নিজেই ঝাঁজযুক্ত কিন্তু এটি প্রদাহ দূর করে।

 

শরীরের ব্যথা দূর করে

যারা শারীরিক ব্যায়াম বিশেষ করে ভার উত্তোলনের জন্য পেশীর ব্যথায় ভোগেন তাদের জন্য প্রক্রিয়াজাত শুকনো আদা কার্যকর। আদা সেবনে তাৎক্ষণিক কোনো ফলাফল অনুভব করা যায় না, তবে  নিয়মিত সেবনে উপকার উপলদ্ধি করা যায়। অসটিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এ অসুখগুলোয় সারা শরীরের প্রায় প্রতিটি হাড়ের জয়েন্টে প্রচুর ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করে প্রক্রিয়াজাত শুকনা আদার গুঁড়া বেশ কার্যকর। অনেকেই হাঁটু বা জয়েন্টের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন। আপনারও যদি এমন সমস্যা হয় তাহলে আদার গুঁড়া আপনার জন্য খুবই উপকারী। গুড় ও ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সারাদিন শক্তি জোগাবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)