কেটে যাচ্ছে গ্যাসের সংকট

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২০ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫৫

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস

স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা ৬০ মেট্রিক টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চালান দেশে এসেছে। সিঙ্গাপুরের স্পট মার্কেট থেকে কেনা এই এলএনজি কার্গো থেকে আনলোডও শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে জরুরিভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে এ নিয়ে মোট দুই কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে স্পট মার্কেট থেকে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, আগামী সপ্তাহ থেকে গ্যাস সরবরাহ আরও বাড়ানো হবে। ফলে শিগগির কাটতে যাচ্ছে গ্যাসের সংকট।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিয়ে প্রথম কার্গো পৌঁছেছে। যা থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে।

আরপিজিসিএল বলছে, আরও ১০ থেকে ১২ কার্গো গ্যাস আমদানি করা হবে। গ্যাসের মূল্য যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে কার্গো আমদানির পরিমাণ সামনে বাড়ানো হবে।

আমদানির এলএনজি আসার ফলে দেশে গ্যাস সরবরাহ আরও বাড়বে জানিয়ে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) এলএনজি ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, এলএনজি নিয়ে আসা প্রথম এই জাহাজটিতে ৬০ মেট্রিক টন এলএনজি রয়েছে। যা ৩০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমান।

তিনি বলেন, স্পট মার্কেট থেকে কেনা এলএনজি নিয়ে আসা জাহাজ থেকে গত বুধবার এলএনজি আনলোড শুরু হয়।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এখন এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ সাড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি। দুদিন আগেও যা সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল।

সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সঞ্চালন লাইনে এলএনজি সরবরাহ হয়েছে ৪৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০ ফেব্রুয়ারিতে ৪৯০, ২১ ফেব্রুয়ারি ৫২৯ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট।

আরপিজিসিএল-এর এলএনজি ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম আরও জানান, স্পট মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্গো আসবে ১১ মার্চ। অন্য কার্গোগুলো আসার শিডিউল এখনও ঠিক হয়নি। তিনি জানান, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আসার পর সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।

পেট্রোবাংলা জানায়, স্পট মার্কেট থেকে ৮ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। যা দিয়ে গ্রীষ্মের চাহিদা মেটানো হবে।

এদিকে দেশে আসা ওই এলএনজি আমদানির ব্যয় হবে ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা। এর আগে এ বছর আরও এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধির পর দীর্ঘদিন এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল।

জানা গেছে, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য রাস লাফফান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতারগ্যাস) এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (বর্তমান নাম ওকিউটি)-এর সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির দাম স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এবং গ্যাসের ঊর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।

এ অবস্থায় স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্য বিবেচনায় নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি এসআরও নং-১৪ আইন/২০২৩ অনুয়ায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয় যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১২ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয় এবং সেই প্রেক্ষিতে এমএসপিএ-টি চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনেরভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত করা এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।

এদিকে এলএনজি আমদানিকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এতে জ্বালানি সংকট কাটারও আশা দেখছেন তারা। তবে এলএনজি সঠিক বণ্টনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, সংকটের সময়ে এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এ গ্যাস না আনা হলে কিছুদিনের মধ্যে গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করত। এবার এলএনজিকে যথাযথ বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি যেন প্রয়োজনীয় গ্যাস পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কয়লার ওপর জোর দিতে হবে। নাহলে আমদানিকৃত গ্যাসের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি কার্গো আসে ওমান থেকেও। দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খোলাবাজার থেকেও এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের শেষ দিকে সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিলে দেশে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। এতে বিদ্যুতে শিডিউল লোডশেডিং করা হয়। সরকারের তরফ থেকে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও প্রকৃত লোডশেডিং তার চাইতে বেশি ছিল। এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং এড়াতে ও বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে আবারও স্পট মার্কেটের এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এখন স্পট মার্কেটের এলএনজির দামও কমে আসছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/আরআর/ইএস)