কোষ্ঠকাঠিন্য ও ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৫ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৯

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। ঠিক মতো পেট খালি করতে না পারলে সারাদিন বেশ অস্বস্তি হয়। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খাবারে অনিয়ম, পানি কম পান করা, অতিরিক্ত পরিমাণে ভাজাভুজি খাওয়া, বাইরের তেল-মশলা খাবারের প্রতি ঝোঁক কোষ্ঠকাঠিন্য ডেকে আনে। এ ছাড়া শরীরে ফাইবারের ঘাটতিও কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। ঠিকমতো পেট পরিষ্কার না হলে বদহজমসহ পেটের নানা সমস্যায় ভুগতে হয়। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে পাইলস, অর্শ্বসহ নানা সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিন শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য ও ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

 

আমলকির রস

আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি, এ-র উপকারী ভিটামিন। যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ঠেকাতেও কিন্তু ভরসা রাখতে পারেন আমলকির রসে। কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরা প্রতি দিন গরম পানিতে আমলকির রস মিশিয়ে খেতে পারেন। সুফল পাবেনই।

 

আপেল

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ফলটি বেশ উপকারী। প্রতিটি আপেলে থাকে প্রায় সাড়ে ৪ গ্রাম আঁশ। তাই সারাদিনে অন্তত একটি আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

 

কমলা

প্রতিটি কমলায় প্রায় ৪ গ্রাম আঁশ মেলে, আর এতে ক্যালরির পরিমাণও কম। এছাড়াও থাকে ‘ফ্লাভানল’ নামক উপাদান যা কাজ করে ‘ল্যাক্সাটিভ’ বা রেচক হিসেবে।

 

পপকর্ন

আশ্চর্য শোনালেও মল নরম করতে কার্যকর পপকর্ন বা খই। এক কাপ খইয়ে থাকে প্রায় ১ গ্রাম আঁশ আর কোনো রকম স্বাদবর্ধক বা লবণ ছাড়া খেলে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কম থাকে। তাই সিনেমা দেখার সময় খই নিয়ে বসুন, উপকার মিলবে শৌচাগারে।

 

ওটস

মাত্র এক কাপ ওটস থেকেই মিলবে প্রায় ২ গ্রাম দ্রাব্য এবং অদ্রাব্য আঁশ। মল নিঃসরণ সহজ করতে এটি বেশ উপকারী।

 

অ্যালোভেরা

ত্বক আর চুলের যত্নে অ্যলোভেরার ভূমিকা সম্পর্কে হয়ত অনেকবার শুনেছেন। ‘ল্যাক্সাটিভ’জাতীয় সবজি হওয়ার মল পিচ্ছিল করতেও এটি উপকারী।

 

কলমিশাক

কলমিশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।কলমিশাকের পাতা ও কাণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকে। আঁশ খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। কলমিশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

 

কলা

কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা এর পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

 

গাজর

গাজর একটি পরিচিত সবজি যা হাতের কাছেই পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় এই সবজিটি প্রাকৃতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ ভালো উৎস। মাত্র আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলবে।

 

শসা

শসার ডায়াটেরি ফাইবার শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহা ঔষধ। কারণ শসার বেশির ভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই নিয়মিত শসা খেলে দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।

 

পেয়ারা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ওজন কমাতে পেয়ারার জুরি নেই। তাই যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা পেয়েরা খেতে পারেন।

 

চিয়াবীজ

প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবারে সমৃদ্ধ চিয়াবীজ কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া ওষুধ হতেই পারে। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমাত সাহায্য করে। ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে চিয়াবীজ দারুণ উপকারী।

 

পানি

প্রত্যেকরই দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তবে অনেকেই তা মানেন না। অতিরিক্ত ঘামের পর শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। তাই বেশি করে পানি খাওয়া জরুরি। শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

 

ডালিয়া

কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খেতে পারেন ডালিয়া। এতে থাকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিনসমূহ। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।

 

যষ্টিমধু

আয়ুর্বেদের তথ্য মতে, কোষ্ঠাকাঠিন্য কমাতে সবচেয়ে বেশি উপকারী হলো যষ্টিমধু। এটি শরীরের হজমশক্তি বাড়ায়। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ যষ্টিমধু গুঁড়া ও সামান্য গুড় মিশিয়ে খেলে সারবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।

 

ডুমুর

ডুমুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে। এই ফল খেলেও কমবে কোষ্ঠকাঠিন্য। তবে ডুমুর খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন গরম পানিতে। ফলে এতে থাকা ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে যাবে ও দ্রুত পেট পরিষ্কার হয়।

 

ঘি ও দুধ

ঘি ও দুধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা যায়। এজন্য রাতে ঘুমানোর আগে ১ কাপ গরম দুধের সঙ্গে ২ চা চামচ ঘি মিশিয়ে খান।

 

নারিকেল তেল

রূপচর্চা থেকে ওজন কমানো— সবেতেই নারকেল তেলের জুড়ি মেলা ভার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এড়াতেও কিন্তু নারিকেল তেল ঠিক তেমন ভাবেই সাহায্য করে। নারিকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। নারিকেল তেলে রান্না করতে পারেন। অথবা সালাদের উপর থেকে নারকেল তেল ছড়িয়ে দিতে পারেন।

 

ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান

হজমশক্তি ঠিক রাখতে ফাইবার দারুণ সাহায্য করে। হজমের গোলমাল থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্ম। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে থাকতে ফাইবার আছে এমন খাবার বেশি করে খান। বেরি, ওট্‌স, বিনস্‌, ডাল, মটরশুঁটিতে রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। নিয়মিত এগুলি খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

ইসবগুলের ভুসি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর মতো ঘরোয়া টোটকাও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ কাজে আসে। প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান। গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হলো আঁশযুক্ত খাবার।

প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান। গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হলো আঁশযুক্ত খাবার। পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। যত দূর সম্ভব মল চেপে না রাখার অভ্যাস করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তোলা।

 

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কিছু কিছু ওষুধ দায়ী। যেমন নিয়মিত আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, আয়রন বা ক্যালসিয়াম বড়ি। এসব বিষয় খেয়াল করতে হবে। কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড বা পাস্তার মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি), চিপস, প্রচুর চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক এবং আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচাকলা ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো।

 

(ঢাকাটাইমস/২৫ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)