চাকরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে দিয়ে বিপুল টাকা আত্মসাৎ, একজন গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৩৮ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পাপড়ি নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। কেবলই পড়াশুনা শেষ করেছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন তিনি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা আজাদীতে স্বাস্থকর্মী হিসেবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে পাপড়ি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ইমেইলে বায়োডাটা পাঠান।

 

কয়েকদিন পরেই ফোন আসে পাপড়ির কাছে। নাম-ঠিকানা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় জিজ্ঞেস করে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে জানায় আপনার সিভি এবং অভিজ্ঞতার কাগজপত্র দেখে আমাদের প্রতিষ্ঠান আপনাকে যোগ্য মনে করে এ পদের জন্য চাকরি  নিশ্চিত করেছে। রেজি. এবং পত্রালাপের ফির জন্য আপনাকে ৫৭৫ টাকা জমা দিতে হবে আজই। পাপড়ি দ্রুত টাকাটা বিকাশ করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন এবং পরিচিতজনদের চাকরি পাবার খবর জানাতে থাকেন।

 

পরদিন আবার ফোন আসে পাপড়ির কাছে। অন্য প্রান্ত থেকে জানানো হয় আপনাকে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হবে। পাপড়ি অ্যাকাউন্ট রয়েছে জানালে তাদের নির্ধারিত হিসাবে বেতন বোনাস এবং অ্যাকাউন্টস মেইনটেইন করার জন্য নতুন হিসাব খুলতে হবে বলে জানায়। টাকাটা দ্রুত বিকাশে পাঠিয়ে দেন পাপড়ি।

 

তিনদিন পর আবার ফোন, আপনার মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে। কেননা সরকার আপনাকে একটি স্কুটি বরাদ্দ দিয়েছে। আরেকটি ল্যাপটপও দিয়েছে। আপনাকে এই চাকরি করতে হলে স্কুটি নিতে হবে, লাগবে বেশকিছু মেডিকেল সরঞ্জাম। আপনাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার এসব জিনিস সরবরাহ করবে আমাদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চাকরির শুরুতেই তো আপনাকে প্রতিষ্ঠান এত টাকা দেবে না। আপনি এজন্য আমাদের জামানত হিসাবে এক লাখ টাকা দেবেন। কোনো কিছু না ভেবেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) মাধ্যমে পাপড়ি সেই টাকা দ্রুত পাঠিয়ে দেয় চাকরিদাতা ওই ব্যক্তিকে।

 

দুদিন পরে চাকরিদাতা ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার চাকরি কনফার্ম। আপনি টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনার টিমের আরও ১০ জন আছে। আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের টাকা সংগ্রহ করে আমাদের পাঠিয়ে দেবেন। চলতি বছরের (২০২৩) জানুয়ারি থেকে আপনারা সবাই চাকরি শুরু করবেন।’ পরে সেই ১০ জনের আড়াই লাখ টাকাও সংগ্রহ করেন পাপড়ি। পাঠিয়ে দেন চাকরিদাতার বিকাশ নম্বরে।

 

পুরো টাকা পেয়ে যান ওই ব্যক্তি, যে প্রথমে পাপড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্ত তাকে আর কোথাও পাওয়া যায় না। টাকা পাওয়ার পরে কথিত চাকরিদাতা পাপড়ির সব যোগাযোগের নম্বর বন্ধ করে দেন। পাপড়ি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। নিম্নবিত্ত পাপড়ি অসহায় হয়ে পড়ে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। উপায়ান্তর না পেয়ে যোগাযোগ করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে।

 

সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম পাপড়ির অভিযোগ আমলে নিয়ে বেশ কিছুদিন বিশ্লেষণ  করে প্রতারককে শনাক্ত করে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর জেলার টঙ্গী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায়  অভিযান চালিয়ে কথিত চাকরিদাতা মো. আজিজুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। আজিজুলের স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার খাজরা গ্রামে। বর্তমানে থাকেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। গ্রেপ্তার আজিজুল ঘটনার পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।

 

প্রতারণায় ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম এবং বিকাশ ও নগদ একাউন্ট জব্দ করা হয়। মূলত অনলাইনে প্রতারনাই তার পেশা। ২০১৮ সাল থেকে এ ধরনের কাজ করে আসছেন। অন্তত ৫০ জন নারীপুরুষের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছে মর্মে স্বীকারোক্তি দেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। একদিনের রিমান্ডে আজিজুল এখন সিআইডি সাইবারের হেফাজতে রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/কেএম)