হজ নিবন্ধন বাতিলের হিড়িক

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

হঠাৎ লক্ষাধিক টাকা খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনকৃতদের কেউ কেউ নিবন্ধন বাতিল করেছেন। তুলে নিচ্ছেন নিবন্ধনের জন্য জমা দেওয়া টাকাও। এ অবস্থায় এবার বাংলাদেশের হজ কোটা পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগের বছরগুলোতে সরকার ঘোষিত প্যাকেজে হজে যাওয়ার সুযোগ পেতে মানুষ তদবির কররেও খরচ বাড়ানোর পর এ বছর হজ কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  

এদিকে করোনা মহামারীর পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু গত মাসে হজের প্যাকেজ ঘোষণা করার পর অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কারণ প্যাকেজ অনুযায়ী এবার কোরবানিসহ হজের ব্যয় ৭ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর এত টাকা খরচ করে অনেকের পক্ষেই হজে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এবারের ১ লাখ ২৭ হাজার হাজির কোটাও পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। হাব এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরদিন থেকেই অনেকেই নিবন্ধন করেও তা বাতিল করছেন। বরং এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৭ জনের কোটার বিপরীতে ব্যালটি-নন ব্যালটি মিলিয়ে মাত্র ১৭ হাজার হজ যাত্রী নিবন্ধন করেছেন। আগে যেখানে হজ নিবন্ধনের জন্য তদবির করা হতো, এখন সেখানে টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি হজ নিবন্ধনের প্রথম দফার তারিখ শেষ হলেও মানুষের অনাগ্রহে এখন নতুন করে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। শুধুমাত্র হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যেই ওই সময়সীমা আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। 

সূত্র জানায়, কোরবানির খরচ ছাড়া এ বছর হজের প্যাকেজ ধরা হয়েছে সরকারিভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। কোরবানিসহ ওই ব্যয় সাত লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যা নিম্ন মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে। হজে খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। বিশ্বের কোনো দেশেই একলাফে বিমান ভাড়া এত বাড়েনি। বিগত ২০১৫ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। 
২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে লাখ ১৯ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল।  

২০২২ সালে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা এবং ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। অথচ এ বছর সৌদি সরকার হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় কমিয়েছে।
কিন্তু গত ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে হজ যাত্রীদের নির্ধারিত বিমান ভাড়া ক্রমাগত বেড়েছে। 

তবে ২০২৩ সালে নির্ধারিত বিমান ভাড়া আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়। মূলত বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে হজের প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্র আরো জানায়, দ্বিতীয় দফা হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো পর্যন্ত কেমন সাড়া পড়ে তা কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাবে। তখন আনুমানিক হজযাত্রীর সংখ্যা হাতে নিয়ে হজ অফিসের টিম সৌদি আরবে গিয়ে ওই হিসেবে বাড়ি ভাড়া করবে। 
তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, সময় বাড়ানো হলেও হয়তো নিবন্ধনের সংখ্যা ৫০ হাজার হতে পারে। কারণ বর্তমানে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন কিন্তু হজে যাচ্ছে না এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে প্রতি বছর হাজিদের নিয়ে যে ব্যস্ততা থাকে এবার তা দেখা যাচ্ছে না। 

এদিকে ট্রাভেল এজেন্সিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ হজের অস্বাভাবিক ব্যয় কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার মতে, এ বছর হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। 

পাশাপাশি কোরবানি ছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য প্যাকেজ মূল্য ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। 

এবারের হজের ব্যয় নজিরবিহীন। হজে ব্যয় যদি ৫ লাখের নিচে রাখা যেত তাহলে কোটা পূরণ হতো। বিমানসহ সবারই লাভ হতো। এখন যদি সেটা ৫০ হাজারও না হয় তাহলে তো দিনের শেষে এয়ারলাইন্সগুলোরই ক্ষতি হবে বেশি। পরিস্থিতি এখন সেদিকেই যাচ্ছে। 

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে হাব সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম জানান, এয়ারলাইন্সগুলো হাবের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। ডলার আর রিয়ালের দাম বাড়ার অজুহাতে হজের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ তেলের দাম ওই হারে বাড়েনি। 

ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও তেলের দামের অজুহাতে হাজিদের পকেট কাটার আয়োজন করা হয়েছে। এমন ব্যয় বৃদ্ধি না কমানো হলে এবার মোট কোটার অর্ধেকও পূরণ হয় কিনা সন্দেহ। প্রতি বছরই যাত্রীদের খরচের বড় একটি অংশ বিমানের টিকিটে যায়। প্রতি বছর বিমান শুধু হজ ফ্লাইট থেকে বড় অঙ্কের মুনাফা করে। যা বিমানের আয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চাইলে অল্প মুনাফা ধরে ভাড়া প্রস্তাব করতে পারে। তাতে হজযাত্রীদের প্যাকেজের মূল্য অনেকটা কমে যায়। বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছিল হাব। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। সৌদি আরবসহ অনেক দেশ হজের খরচ কমালেও বাংলাদেশে খরচ বাড়ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)