শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধলেই সতর্ক হন

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০১

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আজ ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সর্বক্ষণ: সুস্থ দেহ, সুস্থ মন’। নীরব ঘাতক স্বভাবের যে অসংক্রামক রোগটি দেহে বহু ব্যাধির আহ্বায়ক, সেই ডায়াবেটিস রোগটির অব্যাহত অভিযাত্রায় শংকিত সবাই। ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

 

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ও টাইপ টু ডায়াবেটিস।

 

টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ম মেনে চললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। তাদের ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না।

 

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন রক্তের প্রবাহে গ্লুকোজ জমা হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা এখনও বের করতে পারেনি কী কারণে এরকমটা হয়। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে। অথবা অগ্ন্যাশয়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে গেলেও এমন হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।

 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো জীবনধারার রোগ। এর জন্য দায়ী হলো ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রাথমিক অবস্থায় যদি এটি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

 

টাইপ টু ডায়াবেটিসে যারা আক্রান্ত তাদের অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না অথবা এই হরমোনটি ঠিক মতো কাজ করে না। সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা টাইপ টু ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি এবং যাদেরকে বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করতে হয় তাদেরও এই ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তা বেড়ে যাওয়ার উপসর্গগুলোকেও চিনে রাখা জরুরি। না হলে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা অসম্ভব। সাধারত, শরীরের বেশ কিছু লক্ষণের প্রতি সজাগ থাকলেই এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাজে অভ্যাসের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, রোজের যে যে বদভ্যাসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে -

ব্রেকফাস্ট না করা: সকালের জলখাবার সত্যিই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ব্রেকফাস্ট না করে একেবারে দুপুরের লাঞ্চ এবং রাতের ডিনার করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে।

সানবার্ন: খুব বেশি রোদে পোহানোর ফলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সিডিসি অনুসারে, সানবার্নের কারণে ব্যথা হতে পারে, যার কারণে স্ট্রেস বাড়ে, এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে।

কফি: কফি অনেকেরই অত্যন্ত প্রিয়। কফি প্রেমীদের কাছে সারা দিনে ৪-৫ কাপ, এমন কিছু ব্যাপার না। কিন্তু কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি স্বাস্থ্যকর? সিডিসি-র মতে, কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এমনকি চিনি ছাড়াও স্বাস্থ্যকর নয়।

অপর্যাপ্ত ঘুম: শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একেবারে সুস্থ থাকতে হলে রোজ পর্যাপ্ত ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। সিডিসি বলে, ঠিকমতো ঘুম না হলে বা ঘুমের অভাবের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।

মাড়ির সমস্যা: আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন  জার্নালের একটি আর্টিকেল অনুসারে, মাড়ির রোগ হলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। এর ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ডিহাইড্রেশন; শরীরে অপর্যাপ্ত জলও রক্তে উচ্চ শর্করার কারণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রক্তে উচ্চ শর্করার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, যার ফলে ডিহাইড্রেশন আরও গুরুতর দিকে যায়।

রক্তে ইনসুলিনের অভাবই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। চিকিৎসকেরা বলছেন, জীবনযাত্রায় খানিক পরবর্তন আনলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। তার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে করতে হবে শরীরচর্চা, ডায়েটে আনতে হবে বদল। যে কোনও শারীরিক সমস্যা যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা যায়, তা হলে চিকিৎসা শুরু করতেও অনেক সুবিধা হয়। মাথা ঘোরা, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়ার মতো কিছু প্রাথমিক লক্ষণ জানান দেয় ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে। জেনে নিন রক্ত পরীক্ষা করার আগেই শরীরে যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত-

সাধারণত, ডায়াবেটিস দানা বাঁধলে প্রথম অবস্থাতেই টের পাওয়া যায় না। রক্তপরীক্ষা করিয়ে তা বুঝে নিতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। যে কোনও ক্রনিক অসুখের ক্ষেত্রে যত আগে অসুখের উপস্থিতি টের পাবেন ততই ভাল।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে তা বেড়ে যাওয়ার উপসর্গগুলোকেও চিনে রাখা জরুরি। না হলে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা অসম্ভব। সাধারত, শরীরের বেশ কিছু লক্ষণের প্রতি সজাগ থাকলেই এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।

বার বার পানির তেষ্টা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব আসা, দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হয়ে যাওয়া ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গ। এছাড়াও রয়েছে কিছু অজানা উপসর্গ যা দেখলেই সতর্ক হতে হবে।

ঘাড়ের চারপাশে হঠাৎ কালো ছোপ লক্ষ করছেন? এটা কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।

ডায়াবেটিসে আক্রন্ত হলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগী ঘন ঘন ভাইরাস বা ব্যক্টেরিয়ার আক্রমণে সংক্রমিত হতে পারেন। তাই ঘন ঘন যৌনাঙ্গের সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণের শিকার হলে একটু সতর্ক হন। ডায়াবেটিসের রক্তপরীক্ষাটি করিয়ে নিন।

ডায়েট বা শরীরচর্চা করা ছাড়াই ওজন কমে যাচ্ছে। খুশি হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটিও হতে পারে ডায়াবেটিসের লক্ষণ।

যৌনআসক্তি কমে যাচ্ছে? ডায়াবিটিসের অজনা উপসর্গের মধ্যে এটিও অন্যতম লক্ষণ।

যদি দেখেন ত্বকের ঠিকমতো পরিচর্যার পরেও চামড়া থেকে খোসা উঠতে শুরু করেছে, খুব বেশি চুলকানি হচ্ছে তাহলে হতেই পারে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

প্রতিদিনের অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া- এইসবই কিন্তু বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা। যে কারণে ডায়াবেটিসের সমস্যায় আগেই যেমন রাশ টানতে হবে জীবনযাত্রায় তেমনই খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে পরিবর্তন। ডায়েটে এমন কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা রক্তে শর্করার বর্ধিত স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। চর্বিযুক্ত মাছ, শাকসবজি, ভিটামিন সি, ডিম, মটরশুঁটি, টকদই, করলা, মেথি ডায়েটে রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন যারা, এখনই ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করুন। নিয়মিত সুগারের লেভেল দেখুন। নিয়ম মেনে ওষুধ খান। সারাদিনে অন্তত ঘণ্টাখানেক সময় রাখুন হাঁটার জন্য। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

(ঢাকাটাইমস/২৮ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)