‘আগে ভিক্ষা করতাম এহন কাজ কইরা সংসার চালাই’

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৬ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫১

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস

দিন নাই রাইত নাই ভিক্ষা কইরা বেড়াইতাম। বউ আর পোলার যন্ত্রনায় প্রায় এক বছর আগে ভিক্ষা করা ছাইড়া দিছি। এহন হাইটা হাইটা পান বিক্রি করি। এহন আর কেউ ভিক্ষুক বইলা গালিও দেয় না। এহন আর সংসারে নাই টানাপুড়া। দুই ছেলে ও বউ নিয়া আছি শান্তিতে।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে আনন্দের সঙ্গে হেঁসে হেঁসে এভাবেই নিজের জীবন বাস্তবতা তুলে ধরেছিলেন ভিক্ষুক থেকে পান বিক্রেতা হয়ে ওঠা সিরাজ উদ্দিন।

ষাটোর্ধ্ব সিরাজ উদ্দিনের দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন চাঁনখারপুল এলাকায়। দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর এলাকায়। নিজ এলাকায় কোন ধরনের কাজ না পেয়ে ২ হাজার সালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ঢাকায় আসার পর শুরু হয় আরেক জীবন যুদ্ধ। ঢাকায়ও জুটেনি কাজ। ফলে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সিরাজ উদ্দিন।

সিরাজ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঢাকায় আহোনের পর ভাবছিলাম ভালো কাজ পাইলে সংসার চালামু। কিন্তু দুঃখের বিষয় হইলো কাজ না পাইয়া বউ-বাচ্চাগোরে নিয়া পথে-ঘাটে থাকতে হইছে। না খাইয়া থাকতে হইছে।

সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমার বউয়ের নাম সালমা বেগম। কাজের সন্ধ্যানে গেলে বউ নিরাপদে থাকতো না। বউর দেহের উপরে খারাপ নজর আছিলো মানুষের।এমনো সময় গেছে মানুষর সঙ্গে মারামারি করতে হইছে।

সিরাজ বলেন, ক্যান না খাইয়া থাকতে হয়, এজন্য সালমা প্রতিদিন আমার সঙ্গে ঝগড়া করতো। এমনকি মগবাজার, কারওয়ান বাজার রেল লাইনের পাশে খোলা আকাশের নিচে আমরা রাইত পার করতাম।

সিরাজ বলেন, কোন কাজ না পাইয়া রাজধানীতে চুরি, ডাকাতি,  ছিনতাই থেকে শুরু কইরা সব ধরণের অপরাধের কাজ কইরা বেড়াইতাম। এবং সংসার চালানোর জন্য হাতে কিছু টাকা আইতো। কিন্তু এই কাজ বেশিদিন টিকে না। একসময় দেখি নিজের প্রাণ নিয়ে টনাটানি। বিভিন্ন দিক থাইকা আমারে হুমকি দেওয়া শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ভয়ে অপরাধের কাজ বন্ধ কইরা শুরু করি ভিক্ষা করা।

তিনি বলেন, ভিক্ষা করতে গিয়া দেখি আরও অবস্থা খারাপ। প্রতিদিন ভিক্ষা কইরা যা পাই তার অর্ধেক টাকা দালালসহ পুলিশদের দিতে হইতো। আমাগোর দেশে গরীব বেশি, আবার গরীবেও ছাড়ে না গরীবরে। যে যার কাছ থাইকা মাইরা খাইতে পারে। যার শক্তি বেশি হে ক্ষমতা খাটাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আসলে আমাগোর মতো গরীবগোর ঘরে-বাইরে কোন জায়গায়, কোন কাজে শান্তি নাই। তয় ভিক্ষা করা ছাড়তে পাড়ছি হেইটা বড় কথা।

(ঢাকাটাইমস/৫মার্চ/পিআর)