নারীদের চলার পথ হোক আরও মসৃণ

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৩, ২৩:০৬ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩, ২৩:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নারী৷ ছোট এই শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক গল্প। কবি নজরুলের ভাষায়, পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে অর্ধেক তার নর। বিশ্ব নারী দিবসে আমরা পরিবারের, কাছের নারীদের শুভ কামনা জানাই, তাদের ঘিরে আয়োজন করি নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীদের অধিকার কতটুক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই শতকে এসে? নারী দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় নারী শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেছেন নিজেদের না বলা কথা।

নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সুযোগ গুছানোর সময় এসেছে:

নারী শব্দে পরিচিত হওয়ার আগে আমাদের সবার পরিচয় হওয়া উচিত মানুষ। আমরা মানুষ আগে। নারী পুরুষের যে ভেদাভেদ বৈষম্য তা তখনই দূর হবে যখন আগে আমরা নিজেদেরকে মানুষ বলে পরিচিত হবো। নারীকে এখনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশ হিসেবে ধরা হয়। তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সব ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু এই অগ্রাধিকারের সুযোগ গুছানোর সময় এসেছে। সময় এসেছে নারী-পুরুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ রেখে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৃথিবীতে কাজ করে যাওয়া। অগ্রাধিকারের জায়গায় মেধা, মনন এবং পরিশ্রমের সমতা নিশ্চিত করা। একসাথে একটি বৈষম্যহীন সমাজ তথা পৃথিবী তৈরির সময় এসেছে।

নাদিয়া মোমেন, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সব ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই অগ্রাধিকারের সুযোগ গুছানোর সময় এসেছে। সময় এসেছে নারী-পুরুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ রেখে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৃথিবীতে কাজ করে যাওয়া।

নারীদেরকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হোক:

নারী হয়ে জন্মালে পুরুষের চেয়ে অনেকদিকে পিছিয়ে থাকতে হয় এটা খুব ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে যুক্ত করার সুযোগ হয়েছে তবে এখানে এসে আমি উপলব্ধি করলাম বিভিন্ন প্রত্যক্ষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গুলো মেয়েদের দেয়া হয় না, মেয়েরা শুধু পেছনে থেকে পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করতে পারে।

অনেকসময় দেখা যায় অনেক মেয়ে অদম্য, তারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ করে নিলেও পায় না সেই অনুযায়ী কোনো ক্রেডিট। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমি যতটুকু আন্দাজ করলাম যতই নারী অধিকার কিংবা সমতার কথা বলা হোক এখনও মেয়েদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বড় করে দেখা হয়। যদিও এটা অনস্বীকার্য যে প্রাকৃতিক নিয়মেই নারীরা শারীরিক ভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল, তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় এই দুর্বলতা কি কখনো নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? নাকি আমরা আমাদের মানসিক জোরকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে আমাদের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পেরেছি?

নিশাত নায়লা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনেকসময় দেখা যায় অনেক মেয়ে অদম্য, তারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ করে নিলেও পায় না সেই অনুযায়ী কোনো ক্রেডিট। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমি যতটুকু আন্দাজ করলাম যতই নারী অধিকার কিংবা সমতার কথা বলা হোক এখনও মেয়েদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে বড় করে দেখা হয়।

সমাজে নারীদের সঠিক মর্যাদা নেই:

শ্রমিকদের সম-অধিকারের আন্দোলন থেকে নারী দিবস পালিত হয়ে আসলেও বর্তমান নারী সমাজ নিজেদের চিন্তা, চেতনার দিক দিয়েও পুরুষের সম-অংশীদার। বেগম রোকেয়ার সময়কাল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তিনি বাংলার নারীদের শিক্ষা, মর্যাদা, অধিকার সর্বোপরি নারীমুক্তির জন্য বহু লড়াই করেছেন এবং সফলতার সঙ্গে নারীদের জন্য উক্ত অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। কিন্তু বর্তমান সমাজে নারী কি আদৌও সঠিক মর্যাদা পাচ্ছে? একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়৷ বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো নানাভাবে নারীদের হেয় করা হচ্ছে। এখনো একটি মধ্যবিত্ত পরিবার মনে করে নারী শিক্ষা, নারী অধিকার এবং নারী মুক্তি কথাগুলো কেবল কিছু শব্দ যা তাদের চিন্তা চেতনাকে আঘাত করে। বিদ্যা, বুদ্ধির দিক দিয়ে নারীরা আজ পিছিয়ে নেই।

বর্তমান সমাজে নারীরা সব জায়গায়ই তাদের স্বাক্ষর রাখছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে এখনো পিছিয়ে আছে এটা বললেই যথাযথ হবে। নারীদের পোশাক নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা উঠে আসে, নারীরা কখন ঘরে থাকবে, কখন বাইরে থাকবে এই নিয়েই হিসাব কষাকষির শেষ থাকে না৷ দিনদুপুরে রাস্তায় একটি অবুঝ বাচ্চা মেয়ে হেঁটে বাসায় ফিরতে গেলেও কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে দোষটি তার। আসলে দোষটি কার? সমাজ নাকি নারীদের? এক্ষেত্রে আপনার জবাব কি? আজ এই নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবারও বলছি, নারীদের মর্যাদা তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের অবস্থান কোনোভাবে অবহেলা করলে চলবে না।

রজনী হানিফ হিমু, শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান সমাজে নারীরা সব জায়গায়ই তাদের স্বাক্ষর রাখছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে এখনো পিছিয়ে আছে এটা বললেই যথাযথ হবে। নারীদের পোশাক নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা উঠে আসে, নারীরা কখন ঘরে থাকবে, কখন বাইরে থাকবে এই নিয়েই হিসাব কষাকষির শেষ থাকে না৷ 

স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে নারীকে গড়ে উঠার পরিবেশ সমাজে সৃষ্টি হোক:

আন্তর্জাতিক নারী দিবস মূলত নারীদের শ্রদ্ধা সম্মান ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাবিশ্বে পালন করা হয়ে থাকে। দিনটি পালনের মাধ্যমে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় ও তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় । নারীদের ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নতি কোনভাবেই সম্ভব নয়। নারীদের অবস্থানের উন্নতির জন্য প্রয়োজন কুসংস্কার, পুরাতন রীতিনীতি ও আচরণের পরিবর্তন এবং মানবিক আবেগ ও মানবিকতার জয়।

নারীদেরকেও তাদের চিন্তার সংকীর্ণতা থেকে বের হতে হবে, নিজের দৃষ্টির প্রসারতা বাড়াতে হবে। পরিশেষে একটিমাত্র চাওয়া, শুধু একটি নির্দিষ্ট দিনে নারীদের নিয়ে না ভেবে সর্বদা নিজ নিজ জায়গা থেকে নারীদেরকে স্বতন্ত্র একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে।

আনিকা নওশিন, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নারীদের চলার পথ সুগম করতে চাই পুরুষের নৈতিক শিক্ষা:

আমাদের চারপাশে এখনও প্রতিটি জায়গায় একটা সীমা টেনে দেওয়া হয় যে, এটা তুমি করবে ওটা করবে না। আর এই সীমানাটা দেওয়া হয় ধর্মের ভুল ব্যাখা দিয়ে যার কারণে সীমিত ধর্ম জ্ঞানের মানুষ গুলো পুরোপুরি না জেনে না বুঝে এই মেয়েদের কে বাধ্য করতে চায় এসব অপব্যাখা গুলো কে মেনে নিয়ে জীবনে চলতে। আর এই থেকেই হয় একটা মেয়ের জীবনের বঞ্চিত হওয়ার গল্পের শুরু। এই ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মেয়েদের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এজন্য উচিত প্রতিটি মানুষকে আগে সশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।

প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া বিশেষ করে ছেলেদের। তাহলেই কেবল নারীরা সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক ভাবে হেনস্তার শিকার হবে না। তাহলে ই পৃথিবীটা প্রতি টি মানুষের জন্য হবে সুন্দর আবাস্হল।

সুমাইয়া জাকিয়া, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এসএটি)