মৌলভীবাজারে একাত্তরের গণকবর সংরক্ষণে ব্যতিক্রম উদ্যোগ

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৭

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার শহরের বেরী লেকের পার। একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী সাতজন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে এখানে মাটিচাপা দেয়। এক সময় এলাকাবাসী এখানে বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ফেলতো । পথচারীরা যেতেন নাকে রুমাল চেপে। কথিত দুই পাগলের পরিচর্যায় স্থানটি এখন হয়ে উঠেছে শহরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র।

এখানে গোলাপ, রজনীগন্ধা, জবা, গাদাসহ অসংখ্য ফুল প্রতিদিন সুভাষ ছড়াচ্ছে। শহরবাসী এখানে এসে যেমন ফুলের সুভাষ নিচ্ছে, ঠিক তেমনি অনেকে আসেন ছবি তুলতে। বিকাল হলেই ভিড় লেগে থাকে এখানে।

মৌলভীবাজার শরের একমাত্র প্রাকৃতিক হৃদ বেরী লেকের পাশে এই গণকবর। একাত্তর সালে মৌলভীবাজার শহরে প্রথম সাতজন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। পরে এই স্থানে তাদের মাটিচাপা দেয়। কিন্তু দীর্ঘসময় কেউ এই স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি।

স্থানটির পরিচর্যায় নিয়োজিত সাইফুল ভান্ডারী ও জাহাঙ্গীর হোসেন (পাগল ভান্ডারী) জানান, আমরা দিনমজুর মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বীরত্বগাথা শুনেছি। শুনেছি পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হত্যার কথা। এসব কাহিনি রেডিও টেলিভিশনে শুনে আমরা অনুপ্রাণিত হই।

তারা জানান, এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো। পরে জেনেছি একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী এই শহরে প্রথম যে সাতজন মানুষকে হত্যা করে এখানে তাদের করব। কিন্তু এখানে এসে ময়লা আবর্জনা ফেলার দৃশ্য  দেখার পর খুবই কষ্ট পাই। স্থানটি পুরোপুরি  অবহেলিত পড়ে ছিলো। তখন আমি আর আমার বন্ধু জাহাঙ্গীর হোসেন নিজ দায়িত্বে এই স্থানের পরিচর্যা করার সিদ্ধান্ত নেই।

পরিচর্যায় নিয়োজিত অপর ব্যক্তি জাহাঙ্গীর হোসেন পাগল ভান্ডারী জানান, প্রথমে তারা ১৬ টি ফুল গাছের চারা লাগিয়ে লেকের পানি দিয়ে পরিচর্যা শুরু করি। এখন এটা এক বিশাল ফুল বাগানে পরিণত হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে স্থানটি পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পরিবার শিশুদের নিয়ে এখানে এসেছে। তারা ফুলের সুবাতাস নিচ্ছে আর ছবি তুলছে।

আশিক মিয়া নামক এক গৃহকর্তা জানান, মৌলভীবাজার শহরে বিকালে বের হওয়ার মতো তেমন  ভালো কোনো স্পট নেই। বের হয়েছি কোথাও ঘুরতে যাবো। বাচ্চারা এই গোলাপের বাগান দেখে ছবি তোলার বায়না ধরেছে তাই এখানে নেমেছি।

কিশোরগঞ্জ জেলার বাছিতপুর উপজেলার মাইজেরচর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে সাইফুল মিয়া ভান্ডারী এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার আশ্রাবপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন  বলেন, ১৬-১৭ বছর আগে আমরা দুই বন্ধু জীবন জীবিকার তাগিদে মৌলভীবাজার শহরে  এসেছি। আমরা দিনে রিকশা চালাই। বিকালে ভ্যান গাড়িতে চানাচুর ও বাদাম বিক্রি করি। এর ফাঁকে সময় পেলেই আমরা এই গণকবরে লাগানো ফুল বাগানের পরিচর্যায করি।

তারা জানান, প্রতিদিন বিকাল হলেই শহরের অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসে, ফুলের সুভাষ নেয় ছবি তুলে। আর মার্চ ও ডিসেম্বর এলে আমাদের অনেকে খবর করে। কিন্তু পরে আর কেউ যোগাযোগ করে না।

মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, ২০১৪ সালে আমি প্রথম এই গণকবর সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেই। তখন পৌরসভার পক্ষ থেকে একটা স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে দিয়েছি। বর্তমানে যারা ফুলের বাগান করেছে এটা একটা মহৎ কাজ। আমি তাদের ধন্যবাদ দেই।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান   বলেন, তাদের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এসএ)