চুয়াডাঙ্গায় বাসররাতেই বিধবা হলেন নববধূ

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫৩

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মেহেদী রাঙানো হাত, লাল শাড়ি পরে স্বামীর নিথর মরদেহের দিকে অপলক  দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নববধূ। বাসর রাতেই স্বামীকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।

এদিকে নববধূকে নিজ হাতে সোনার গহণা ও রুলি পরিয়ে দেওয়া হলো না লিটন আলী মাস্টারের। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর  উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামে এমনই  একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।

সদর  উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মৃত শুকুর আলীর ছেলে লিটন আলী (৪২) শুক্রবার রাতে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ জেলার গান্না ইউনিয়নের কালুহাটি ঘোপপাড়া গ্রামের সোলায়মান হোসেনের মেয়ে ফাতেমা খাতুনের সাথে। বিয়ে করে রাত ১০টার দিকে নববধূকে নিয়ে বাড়িতে আসেন। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে সদর  হাসপাতালে ভর্তি করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর  হাসপাতালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রস্তুতি নেওয়ার সময়  তিনি হাসপাতালেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লিটন আলী পাশের ঝিনাইদহ জেলার ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লিটন দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে বড়।  সাংসারিক জীবনে তার লামিয়া খাতুন (৮) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে তার স্ত্রী আবার গর্ভবতী হয়। গর্ভাবস্থায় তিনি ডায়রিয়া এবং জ্বরে আক্রান্ত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার প্রথম স্ত্রী গত ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। লিটনের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়া সময় মেয়ে লামিয়ার টনসিল অপারেশন করা হয়েছিল। সে সময়  মায়ের মৃত্যুর খবর  তাকে জানানো হয় নি। পরবর্তীতে ছোট্ট মেয়েটি জানতে পারে তার মা আর এই পৃথিবীতে নেই।

এই  ঘটনার আড়াই মাস পরে লিটন ছোট মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গত শুক্রবার আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাসররাতে প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া রুলি নিজ হাতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে পরিয়ে দেওয়ার সময়  হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর  হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়  রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ফারুক হোসেন চাঁনের ভাতিজা লিটন আলী মাস্টার। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ লিটনের প্রথম স্ত্রী মারা যায়। গত শুক্রবার তিনি ছোট্ট মেয়েটির কথা চিন্তা করে আবার বিয়ে করেন। ঘরে নববধূকে নিজেই চির বিদায় নিলেন লিটন মাস্টার। সত্যিই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। পরিবারটির উপর  দিয়ে একের পর এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এলএ)