ভাসানী অনুসারী পরিষদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২৩, ১০:৩১ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:৩০

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস

রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দল ও সংগঠনের মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক ভাসানী অনুসারী পরিষদ। জোটসঙ্গী হলেও সংগঠনটির রাজনৈতিক পরিচয় জোটের ভিতরেই উঠেছে সেই প্রশ্ন।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রাজনৈতিক দল কি না তাদের জানা নেই। কেউ বলছেন, যে উদ্দেশ্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো তা থেকে তাদের বিচ্যুতি ঘটেছে।

মূলত মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে স্মরণ করা বা তাঁর স্মৃতিচারণ করার জন্যই সংগঠনটি তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী ও জাপার একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এখন এ সংগঠনের নেতারা কেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কাজ করছে তা আমার জানা নেই।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, তাঁর সময়ে এ সংগঠনের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তখন বিভিন্ন সেমিনার এবং মওলানা ভাসানীর স্মৃতিচারণ করে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতাম। এখন এটি কেন রাজনৈতিক ব্যানারে আনা হচ্ছে তা রফিকুল ইসলাম বাবলু (ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক) ভালো বলতে পারবেন।’

গত ৮ জানুয়ারি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৫টি অরাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ গঠিত হলে তখনও বিষয়টি জোটের অন্যান্য শরিকদের মধ্যে সমালোচিত হয়। এক পর্যায়ে জোটের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পেশাজীবি গণতান্ত্রিক জোট’।

গত বছরের ৮ আগষ্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গঠিত হয় রাজনৈতিক মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চ।

এই দলগুলোর মধ্যে সকলের অতীতের রাজনৈতিক পরিচিতি আছে। তবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ কোনো রাজনৈতিক দল না হয়েও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক হয়।

সংগঠনটির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু দাবি করেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ একটি রাজনৈতিক দল। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরের ২ জুলাই থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রাজনৈতিক দল না হলে তো কোনো জোট করতে পারতাম না।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত একনায়কতন্ত্র সরকারের বিরুদ্ধে যারাই আমাদের সঙ্গে শরিক হবে সবাইকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করবো।’

‘তবে, তারা (ভাসানী অনুসারী পরিষদ) কেন এই নামে রাজপথে আমাদের সঙ্গে আছে তা আমার জানা নেই। যদিও গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও আমাদের সঙ্গে শরিক হতে পারে।’

কোনো সংগঠনের রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করাটা তাদের স্বাধীনতার বিষয় বলে মন্তব্য করছেন গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তির নাম করে একটি সংগঠনকে রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করা তাদের স্বাধীনতার বিষয়। এখন জনগণ তাদের কিভাবে নেবে ভবিষ্যৎ বলে দেবে। তবে, আমার জানা মতে, তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে।’

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ রাজনৈতিক দল কিনা তা সংগঠনটির নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে কোনো রাজনৈতিক দলের বাইরে সামাজিক সংগঠনকেও আমরা আমাদের শরিক করতে পারি।’

এ বিষয়ে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলুকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া মেলেনি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/ডিএম)