বাজার নিয়ন্ত্রণে চলবে অভিযান

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৭ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১১:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি মোকামগুলোয় অভিযান চলবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার মনিটরিং করবে। পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মূলত রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। 
ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে। 

ইতোমধ্যে সরকার এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা সহজ করেছে। বাজারে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে এবং  ১৫ পণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহে মাঠে থাকবে টিসিবি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পণ্য হাতবদল পর্যায়ে যাতে মজুত না হয় তা নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে নজরদারির কাজটি করা হচ্ছে। আর বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ হলো, যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে ওই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার কমিটি যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়, তাই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দরকার হলে কমিটির অনুমোদন বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে। কারণ বাজার কমিটি সক্রিয় থাকলে ওই বাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুত করা সম্ভব হবে না। 

সূত্র জানায়, বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতায় পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন সব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সঙ্গে এ বছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, ডলারের দাম বেশি থাকা এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানিনির্ভর পণ্যের আমদানি কমে গেছে। ফলে বন্দরে ওসব পণ্যের সরবরাহ কম। ওই কারণেও এ বছর রমজানে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। 

বিগত ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করা হয়েছিল। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি খেজুর আমদানি করা হয়েছে। গতবারের তুলনায় ওই সময়ে পণ্যটি ৩১ শতাংশ কম আমদানি করা হয়েছে। তবে পণ্যের বাজারে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায়। যার ফলে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে বাজার।

সূত্র আরো জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিপণন সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এ বছরই প্রথমবার দেশের এক কোটি পরিবারের কাছে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি রমজানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবে। এর মধ্য দিয়ে কমপক্ষে দেশের ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এ বছর কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে যাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজপাতা। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেল, চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি। ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। ডলার জটিলতার কারণেই এ বছর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। 

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। আর সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি। তার মধ্যে কেবল রোজার সময় ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে। তাছাড়া সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে শুধু রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ফলে ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে দেশে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয়। আর রোজার মাসেই তার ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয়। এ সময় পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার রোজার সময় ৫ লাখ টন ব্যয় হয়। 
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ টন পাম অয়েল ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছিল। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে পণ্যটির আমদানি বেড়েছে। মোট ১২ লাখ মেট্রিক টন পাম অয়েল এবং অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। এখানে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে আমদানিকারকদের মতে, কাস্টমসের এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ নয় বলে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে কোনো পণ্যের ঘাটতি নাই। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবে আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার দর আন্তর্জাতিক বাজার দরের ওপর নির্ভর করছে। সেক্ষেত্রে সময়ই বলে দেবে দেশীয় বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ মার্চ/আরকেএইচ)