হৃদয়ে অমর বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৩ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:২১

ড. কাজী এরতেজা হাসান

আজ ১৭ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণ-জুলুম থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি নির্দেশে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে জেলজুলুম সহ্য করে বাঙালিকে স্বাধীনতার সোপানে নিয়ে গেছেন।

৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। তবে ৩০ লাখ শহীদ ও হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, লাল সবুজ পতাকা। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়।

১৯২০ সালের এই দিনে (১৭ মার্চ) তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, আর মা সায়েরা খাতুন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। পরবর্তী সময়ে ‘খোকা’ নামের এই শিশুটিই হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারি।

শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার। কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে, তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর থেকে শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছেন।

বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪ বছর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থেকেছেন। দুইবার ফাঁসির মঞ্চে হয়েছেন মৃত্যুর মুখোমুখি। কিন্তু আÍমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি। দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায়

বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪- এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২- এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬- এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও আপোষহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যেখানে তিনি ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাÍক অসহযোগ আন্দোলন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আÍদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। বাংলা-বাঙালি-বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ১৯৭৫ সালে এ জাতির ভাগ্যে নেমে আসে আরেকটি কালরাত্রিতে। ওই বছরের ১৫ আগস্ট বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে শুরু করে নানা ষড়যন্ত্র। কিন্তু তার সংগ্রাম ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য তা মুছে ফেলতে পারেনি। বাংলা ও বাঙালি যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, মুক্তিকামী ও শান্তিকামীর হৃদয়ে।

তাইতো কবি লিখেছেন-

‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা

গৌরী, যমুনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার

শেখ মুজিবুর রহমান।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাজনীতির কবি, মহানায়ক, সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি। এ দেশ ধন্য তার মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালির জন্ম হয়েছিল বলে। তিনি বাংলার বুকে জন্ম না নিলে আমরা আদৌও স্বাধীনতা পেতাম কি-না জোর দিয়ে বলা যায় না। হয়তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা অধরাই থেকে যেত। জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির পিতার প্রতিটি স্বপ্ন পূরণে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ’৭৫ জাতির পিতা সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশে ক্ষমতায় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা জেকে বসেছিল। তারা দেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছে। তবে ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং জাতির পিতাকে আন্ধকারে ঢেকে রাখার যে প্রয়াস পাকিস্তান প্রেতাত্মারা নিয়েছিল তা বানচাল করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম আজ জাতির পিতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। তিনি ছাড়া কোনও ভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না সেটা এ প্রজন্ম জানতে পারছে। আমরা মনে করি কখনও আর জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার আয়োজন কেউ করতে পারবে না। দিন যত যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম ততই উদ্ভাসিত হচ্ছে। বিশ্বের সেরা নেতাদের প্রথম কাতারে জাতির নাম সগৌরবে উচ্চারিত হয়। তার নাম শুনলে যে কোনো বিশ্বনেতার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম

সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ

সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

পরিচালক, এফবিসিসিআই

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ