‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’ দেখে মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২৩, ২১:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

২৫ মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাত। পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের আপামর জনতা গভীর নিদ্রায় শায়িত। ঠিক ঐ সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র নিরাপরাধ মানুষের উপর অতর্কিত গুলি চালিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। আর এরই মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবনে চলতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের মধ্য হতে বেরিয়ে আসতে থাকে বিভিন্ন দেশের স্বার্থ ও তাদের সংশ্লিষ্টতা।

“সলটিারি কনফাইনমন্টে”নাটকে দেখানো হয়েছে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের স্বার্থ, ক্ষমতা, আধিপত্য আর ভূ-রাজনীতির খেলা। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি ভূখন্ডকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।  অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। কারাগারে মানবেতর জীবন। তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার নানা ষড়যন্ত্র চলছে, কবর খোঁড়া হচ্ছে। তবুও মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সিদ্ধান্তে অটল, অনড় এবং অবিচল। যার ফলাফল, পাকিস্তানের পরাজয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানে ক্ষমতার পালা বদল হয়। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পায়। কিন্তু অবসান কি হয় ভূ-রাজনীতির? এই নিয়ে নাটক ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একোডেমির স্টুডওি থয়িটোর হলে নাট্যম রেপার্টরি নাটক “সলিটারি কনফাইনমেন্ট’র”উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে। নাট্যম রেপার্টরির এটি ৮ম প্রযোজনা। অভিনেতা ও নাট্যকার শাকিল আহমেদের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আইরনি পারভীন লোপা।

নাট্যকার শাকিল আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে জাতিগত ভাবনারও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আবার মানবতা, মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল চিন্তাধারা যখন প্রতিনিয়ত অন্ধশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয় তখনও বদলে যায় জীবনের গতিপথ, ভাবনা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস।

শাকিল বলেন, রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বীরগাঁথা সেই ইতিহাস। কিন্তু এই পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে সত্য, মিথ্যার মিশ্রণে সৃষ্ট বিকৃত ইতিহাস আর ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে বেড়ে উঠা প্রজন্ম- বাংলাদেশ জন্মের সঠিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতিগত ঐক্যের কাছ থেকে যোজন যোজন দুরে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অন্ধশক্তি- মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার গতিপথকে সংকচিত করে চলেছে। তাই বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস অনুসন্ধান ও দর্শকের সামনে তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস- নাটক ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’।

নাট্যকার বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্ব রাজনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাই আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এরূপ ইতিহাস নির্ভর নাটক রচনা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। কারণ তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রেফারেন্সের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। অনুসন্ধানে এরকমও দেখা গেছে যে, একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন রেফারেন্সে তথ্যের ভিন্নতা রয়েছে। নাট্যকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা এখানেই- সঠিক তথ্য নির্বাচন ও  গ্রহণে। সেই সাথে ঐসব তথ্যের ভিত্তিতে অর্জিত নির্যাসের সমন্বয়ে নাট্যরচনা এবং শেষ পর্যন্ত নাটক হয়ে উঠার চ্যালেঞ্জ তো থেকেই যায়। তার উপর আমার মতো নবীনের জন্যে তো বটেই।

“সলিটারি কনফাইনমেন্ট”নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে যারা অভিনয় করেন, ইয়াহিয়া চরিত্রে - দীপু মাহমুদ,  জুলফিকার আলী ভুট্টো - মোঃ ফখরুজ্জামান চৌধুরী, মিসস্ট্রেজ- জয়া আহমেদ, ইয়াহিয়ার সেক্রেটারি- শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, মুজিব- হাবিব মাসুদ, রেণু- অনন্যা কথা, আমেরিকান প্রতিনিধি- শিমুল সাইফুল, জেলার- এইচ এম মোতালেব, পাকিস্তানি সৈন্য- শরিফুল ইসলাম মামুন, হিমেল হিমু।

নেপথ্য কলাকুশলীরা হলেন, নির্দেশনা, মঞ্চ ও পোষাক- ড. আইরিন পারভীন লোপা, আবহসংগীত- শিমুল সাইফুল, আলো- বজলুর রহমান, মেকআপ- শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, প্রপস-  হিমেল হিমু, ধারাবর্ণনা- আব্দুল্লাহ বিপ্লব, ভিডিও এডিটিং- মুজিবুল হক, পোস্টার- শাকিল নুর, আবহসংগীত প্রক্ষেপণ-  শাকিল আহমেদ, স্টেজ ম্যানেজার- শরিফুল ইসলাম মামুন, টিকেট কাউন্টার- কিবরিয়া, তমা এবং নাগিন, মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা- শরিফুল ইসলাম মামুন, হ্যাপী, হিমেল হিমু, রাশেদা, তমা এবং মাসফিক, প্রযোজনা অধিকর্তা -  শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, প্রযোজনা উপদেষ্টা- মঞ্চসারথি আতাউর রহমান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/পিআর)