আখাউড়ায় দেড় যুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা!

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৮

হান্নান খাদেম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম। উপজেলার ৮টি বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক এবং কয়েকটিতে সহকারী প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে। বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চললেও এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তেমন তোড়জোড় নেই। ফলে এসব বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ‘দুর্বল’ ব্যবস্থাপনা আর কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসহযোগিতার কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকই। শিক্ষার মান উন্নয়নে অনতি বিলম্বে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলায় ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮ টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং কয়েকটি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে  শাহপীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক এবং ১২ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।  হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য ছিল তা কয়েক মাস নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তুলাই শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামলা জনিত কারণে ২বছর যাবত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

ঘোলখার রানীখার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ১ বছর ধরে। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষককে অনিয়মের কারণে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ২০২২ সালের জানুায়ারী মাসের ৫ তারিখ চূড়ান্ত বরখাস্ত করেছে। তবে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। তিনিও দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।  ছয়ঘড়িয়া আলহাজ্ব শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে ১ বছর যাবত। মনিয়ন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ মাস যাবত সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। ভাটামাথা আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। আখাউড়া রেলওয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।  এসব বিদ্যালয়ে ‘ভারপ্রাপ্ত’ প্রধান দিয়ে কার্যক্রম চলছে।

খড়মপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ খাদেম বলেন, কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা খারাপ। কিছু সংখ্যক শিক্ষকের কারণে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে।

দূর্গাপুর গ্রামের সফিউল স্বপন নামে এক অভিভাবক বলেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মান সম্মত লেখাপড়ার কথা চিন্তুা করে  শিক্ষকের ঘাটতি পুরণে দ্রæত উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

তুলাই শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাত হোসেন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন করছেন।

তিনি বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির দায়েরকৃত মামলার কারণে ২ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বর্তমানে নতুন সভাপতি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, একজন পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষকের যে মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা থাকে সাধারণ শিক্ষকের তা তা থাকে না। তবু আমরা আমাদের যোগ্যতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করছি।

জানতে চাইলে কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, প্রায় ১৯ বছর যাবত প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য এবং ১২ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক নাই। তিনি বলেন, আমার জানামতে ৩ বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন নিয়োগ কি কারণে যেন পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।

আখাউড়া উপজেলার সদ্য সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শওকত আকবর খান বলেন, আমার দায়িত্বকালে খড়মপুর স্কুলে ২ বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে নিয়োগ কার্যক্রম ব্যহত হয়। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সঠিকভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করতে পারে না। এতে পড়ালেখার মান নষ্ট হয়। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে অনতি বিলম্বে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিকল্প নাই।

এ ব্যপারে জানতে সদ্যযোগদান করা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি। তারা যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া না করে আমরা কেবল তাদেরকে অনুরোধ করতে পারি। আমি এ উপজেলা নতুন যোগদান করেছি। আমি চেষ্টা করবো প্রত্যেকটি স্কুলে যাতে শূন্য পদ পূরণ করে। কারণ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে সাময়িক কাজ চালানো যায়। বছরের পর বছর চালানো যায় না। একজন প্রধান শিক্ষক যেরকম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান তা করতে পারে না। এতে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তার সহকর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রে তার আদেশ পালন করে না।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এআর)