র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রবিবার, থাকবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা-নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশে গঠিত চৌকস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।

২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর দিনটিকে রেইজিং ডে হিসেবে পালন করে আসছে বাহিনীটি। তবে এবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এগিয়ে আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এই বাহিনী ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রায় তিন সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) রমনা বটমূলে নিরাপত্তা দিয়ে র‍্যাব তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের ২১ জুন পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু বাহিনীটি।

বর্তমানে বাহিনীটির মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। প্রতিষ্ঠার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও স্ব স্ব এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র‍্যাব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা।

বর্তমানে সারা দেশে এই এলিট ফোর্সটির ব্যাটেলিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।

র‌্যাব দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরপরই মাঠে নামেন র‌্যাব গোয়েন্দারা। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জঙ্গিকে।

এছাড়া গুলশানের হলিআর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর র‍্যাব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বাহিনীটি। বিশেষ দিনগুলোতেও তাদের নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক জঙ্গি ও জলদস্যু র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র‌্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রেখেছে। র‌্যাবের এই ভূমিকাকে মানবিক বিচারেও এগিয়ে রাখছেন মানবাধিকার বিষয়ে সচেষ্ট ব্যক্তিরা।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো অভিযানে বড়বড় রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনে বাহিনীটি। যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মাদক, অস্ত্র ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম।

‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ মোবাইল অ্যাপস সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ, নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য, খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতির বিষয়ে যে কেউ সহজে জানাতে পারে।

র‌্যাব সদর দপ্তর ও অন্যান্য ব্যাটালিয়ানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। গতবছর ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এবছর তিনি সরাসরি অংশ নিচ্ছে। এজন্য সব ধরণের আয়োজন করেছে বাহিনীটি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হচ্ছে। সাহসিকতা ও সেবা দুই ক্যাটাগরিতে র‌্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বন্ধুর মতো সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য এই দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা; সেই সঙ্গে দেশ থেকে মাদক, অস্ত্রকারবারি ও সন্ত্রাস মুক্ত করা। এই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সচেষ্টভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বেশকিছু ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। যার মধ্যে একটি দস্যুমুক্ত সুন্দরবন।'

র‍্যাব ফোর্সের এই দীর্ঘ পথচলায় পাশে থাকার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের চলার পথকে অনেক সহজ করেছেন। র‍্যাবের সুনাম এবং সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আপনাদের পাশে থাকার গল্প। দেড় যুগ পেরিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞায় আপনাদের দোয়া এবং শুভকামনা আমাদের একান্ত কাম্য।

এদিকে বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান এলিট ফোর্সটির প্রধান। তিনি বলেন, র‌্যাব এলিট ফোর্স; সমস্ত বাহিনী থেকে চৌকস সদস্যদের নিয়ে র‌্যাব গঠন করা হয়েছে। আমাদের মূলমন্ত্র হলো ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’। আমরা আমাদের মূলতন্ত্র ধারণ করি, লালন করি, পালন করি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। এজন্য র‌্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা এবং মানুষ র‌্যাবকে নিরাপত্তার প্রতীক মনে করে। আমরা অপশক্তি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এসএস/ডিএম)