ভিন্ন ধারার সংকটকালে পুলিশের তিন গুরু দায়িত্ব, ডায়নামিক একজন বেনজীর আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৬:৩৫ | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৬:২৬

দেশের একেকটি ভিন্ন ধারার সংকটকালে পুলিশের তিনটি দায়িত্বপূর্ণ পদে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। সাহসিকতা, দক্ষতা আর সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ পুলিশ বিভাগে তৈরি করেছে তাঁর অসামান্য ডায়নামিক অবস্থান।

তিনি ড. বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩৭তম পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।

রাজধানী ঢাকায় যখন জঙ্গিরা আস্তানা গাড়ছিল, রাজনৈতিক সন্ত্রাসে অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় নগরবাসী, তখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের। এই গুরুদায়িত্ব নিয়েই দশম সংসদ নির্বাচনের আগে উত্তুঙ্গ পরিস্থিতিতে সারা দেশ একরকম অচল হয়ে পড়লেও রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হন বেনজীর আহমেদ।

এরপর র‍্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব যখন পান, তখন বাহিনীটির ভাবমূর্তি তলানিতে। বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের দায়িত্ব নিয়েই বাহিনীর উন্নয়ন, এর সদস্যদের পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের সঙ্গে সেতুবন্ধ রচনা করে অনন্য অবস্থানে নিয়ে যান।

যখন আইজিপির দায়িত্ব পান তখন দেশজুড়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছিল। মহামারীকালেও বাহিনীকে নতুন ভাবনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে নিয়ে যান মানুষের কাছে।

আইজিপি থাকাকালীন বেনজীর আহমেদ জনমুখী সেবা চালু করতে থানা থেকে বের হয়ে পুলিশকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনা দেন।

তারই আলোকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষের পাশে থেকে সেবা দেওয়া, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে নজির গড়ে পুলিশ বাহিনী।

তাঁর নিজের কর্মজীবনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে আধুনিক কৌশল কাজে লাগিয়ে পুলিশকে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্বুদ্ধ করেন সাবেক এই আইজিপি। পাশাপাশি নিজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক ও মানবিক কাজ করেও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি।

তাঁর কাছে শেখার আছে অনেক

পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মতে, বেনজীর আহমেদ পেশাগত জীবনে অবৈধ কোনো কাজকে কখনো প্রশ্রয় দেননি। মেধাবী, সৎ ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে বাহিনীর সদস্যদের কাছে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।

কর্মজীবনে একজন ডায়নামিক কর্মকর্তা হিসেবে বেনজীর আহমেদকে একবাক্যে সবাই মেনে নিতেন। কারণ, একাধারে মেধাবী, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রত্যুৎপন্নমতি এই সুযোগ্য নাগরিক সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন।

পেশাদারি মনোভাব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি শতভাগ আনুগত্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ধরন—বেনজীর আহমেদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলেও মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

অনন্য পুলিশপ্রধান

বেনজীর আহমেদ আইজিপি হয়েই দুই লাখ পুলিশের সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের যোগাযোগকে জনবান্ধব করতে একের পর এক উদ্যোগ নেন। তারই অনুপ্রেরণায় উজ্জীবীত পুলিশ সদস্যরা করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগেও জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেন।

পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একের পর এক যুগান্তকারী উদ্যোগে বাহিনীটির পেশাগত উৎকর্ষ সাধন ও গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করেন বেনজীর আহমেদ। বিশেষ করে জঙ্গি, মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তার নেওয়া জিরো টলারেন্স নীতি সকল মহলের কাছে প্রশংসা পায়।

বেনজীর আহমেদ আইজিপি থাকাকালীন পুলিশ সদস্য নিয়োগে এই প্রথম অনলাইন আবেদন পদ্ধতি চালু করা হয়। প্রথমবারের মতো পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনেন। সংশোধন আনা হয় আইনেও। একইভাবে এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআইও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বদল আনেন।

ডিএমপি ও র‌্যাব প্রধানের দায়িত্ব পালনেও ডায়নামিক

বেনজীর আহমেদ প্রায় সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন ডিএমপি কমিশনারের। শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, ডিএমপিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নও করেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিরপুর পিওএমএর সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ, ডিএমপিতে আধুনিক মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড ও ৮টি নতুন থানা স্থাপন অন্যতম।

ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্বের পর প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালনে সাফল্যের দৃষ্টান্ত রাখেন সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর। তাঁর নেতৃত্বে পুলিশের এলিট ফোর্সটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গণমানুষের আস্থার জায়গাতে পরিণত হয়।

শিক্ষা-দীক্ষা ও ডক্টরেট ডিগ্রি

১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তা হিসেবে কঠিন গুরুদায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

‘কনট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি’ শিরোনামে তিনি উচ্চতর এক গবেষণা অভিসন্দর্ভে তিনি তুলে আনেন জাতীয় অর্থনীতিতে পুলিশ শান্তিরক্ষীদের অবদান এবং শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় তিন দশক দায়িত্ব পালনে লব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের পুলিশ বাহিনী সংগঠনে ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছে।

বেনজীর আহমেদের গবেষণায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও পরিস্ফূট হয়েছে।

এছাড়াও বেনজীর আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরের বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও অধ্যয়ন করেছেন।

বেনজীর আহমেদের উদারতা

বেনজীর আহমেদ অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, শুভানুধ‍্যায়ী ও অসহায় পরিবারের প্রতি তার উদারতা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনাকালে নিহত সাংবাদিক ও পুলিশ পরিবারকে নগদ টাকা ও উপহারসামগ্রী পাঠান তিনি।

বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে মহামারী আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল ভাড়া করাসহ নানা উদ্যোগ নেন। কোয়ারেন্টাইনে ও আইসোলেশনে থাকা পুলিশ সদস্যদের খোঁজখবর রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিদর্শন কমিটি করেন।

এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করেন সাবেক এই আইজিপি।

পুলিশের সর্বোচ্চ পদক লাভ

বেনজীর আহমেদ চাকরিজীবনে সর্বোচ্চ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পলনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। ২০২০ সালে ষষ্ঠবারের মতো বিপিএম (সাহসিকতা) অর্জনের রেকর্ড গড়েন তিনি। এর আগে ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে এই পদক তার সাফল্যের মুকুটে যোগ হয়।

ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান

সার্ক অঞ্চলের এই আট দেশকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি থাকার সময়ে শত শত দাবাড়ু তৈরি করতে কাজ করেন তিনি। তার উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশ নিয়ে ঢাকায় হয় ‘ফার্স্ট সার্ক চেজ চ্যাম্পিয়ন’ প্রতিযোগিতা।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :