শিবচর ট্রাজেডি: দোষীদের বিচার দাবি নিহতের স্বজনদের

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫৪ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:২৩

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

কারো হারিয়েছেন সন্তান, কারো পিতা কেউবা পরিবারের একজনকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অনেকেই ঢাকায় কর্মস্থলে যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। রবিবার সকালে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৭ জন নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হন।

নিহত ও আহতদের পরিবারের দাবি, অতিরিক্ত স্পিডে গাড়ি চালানোর কারণেই ঘটেছে এই মর্মান্তিক দুঘর্টনা। তাই দোষীদের বিচারের দাবি স্বজনহারাদের।

এদিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

নিহত ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- গোপালগঞ্জ গোপিনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ, সদর উপজেলার নশর আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি, মোকসেদপুর এলাকার আমজেদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী, খুলনা সোনাডাঙা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, খুলনা সাউথ মেন্টাল রোড এলাকার চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসুন ঘোষ, ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা, আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন, বাগেরহাট জেলার শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার, ফরিদপুর হিদাডাঙ্গা এলাকার সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে ইসমাইল, নড়াইল লোহাগড়া এলাকার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার, বাসের চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও হেল্পার মিরাজ।

সরেজমিনে জানা গেছে, সকালে খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাসটি পদ্মাসেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এলে বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে পড়ে যায়। এসময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত মাসুদের স্বজন জানান, মাসুদ ঢাকা কলেজের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী ছিল। তিন দিন আগে মা-বাবা ও পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে। বৃহস্পতিবার ভোরে ইমাদ পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই ঢাকা আর যাওয়া হলো না। তাই তো মাসুদের বড় ভাই শফিক খান বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

একমাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষমকে হারিয়েছেন রাশেদ আলীর পরিবার। রাশেদ আলী ঢাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন। তিনি সপ্তাহিক ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। সকালে চাকরিতে যোগ দিতে দিয়ে প্রাণপ্রদীপ নিভে গেল। তার পরিবারও চাইলেন দোষীদের বিচার।

পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, এ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে। বাসটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। তবে নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে বেশ কয়েকজনই গোপালগঞ্জর। বিকালে ৫টার দিকে সব মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘গাড়িটি অতিরিক্ত স্পিডের কারণে দুঘর্টনা ঘটেছে। তবে সকালে বৃষ্টির কারণে হাইওয়ে কিছুটা পিচ্চল হয়েছিল। সেটাও দুঘটর্নার কারণ হতে পারে। আসলে এখনোও কিছু নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে প্রশাসন। প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আর সামগ্রিক বিষয় তদারকি করছেন ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাতদন্তে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এলএ)