শিবচর ট্রাজেডি: বিদেশ যাওয়া হলো না মোস্তাকের

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:৪২ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩, ২১:০৫

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরাতে বিদেশে পাওয়া হলো না মোস্তাকের। পাসপোর্টের জন্য আঙ্গুলের ছাপ দিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন মোস্তাক আহমেদ (৪২)। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসেই সিঙ্গাপুর যেতেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মোস্তাকের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

রবিবার সকাল ৮টার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোস্তাক আহমেদ গোপালগঞ্জ জেলার বনগ্রাম এলাকার মৃত সামসুদ্দীন শেখের ছেলে। ইতালিপ্রবাসী ঢাকাটাইমসের ইউরোপ ব্যুরো প্রধান কমরেড খন্দকারের ফুফাতো ভাই।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কোনে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিল মোস্তাকের স্ত্রী জোনাকি বেগম। স্বামীর মরদেহ গ্রহণ করতে দুই সন্তানকে নিয়ে শিবচর এসেছেন তিনি। স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই জোকানি বললেন, ‘এক ঝড়ে আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। আমার ছোট ছোট দুই পোলারে এতিম কইরা ওনি চইল্লা গেল। ওগো আমি কি বুঝ দিমু। আল্লা আমার মরণ দিলো না ক্যান। আমার স্বামীকে তোমরা ফিরাইয়া দাও।’

জোনাকি আক্তার আরো বলেন, ‘সংসারের সুখের আশায় মোস্তাক বিদেশে আবারো যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তা পূরণ করল না। যে বাসের কারণে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে, তাদের কঠোর বিচার দাবি করি। যেন আইনের ফাঁক-ফোকরে এরা বের হয়ে যেতে না পারে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

জোনাকির ভাই মো. সেলিম বলেন, ‘মোস্তাক আগেও প্রবাসে ছিল। গত কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করে। এখন ব্যবসার অবস্থা ভালো না, তাই আবার সিঙ্গাপুর যেতে চেয়েছিল। আমার বোনের দুই ছেলে। বড় ছেলে ইশানের বয়স ৮ বছর আর ছোট তাসমিনের বয়স ৪ বছর। ছোট ছেলেটা বোঝে না যে তার বাবা মারা গেছে। বাবাকে দেখবার জন্য আমার কাছে বারবার আসে। অনেক কান্নাকাটি করছে। মৃতদেহ কীভাবে মাটিতে দেব।’

মাদারীপুর জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, রবিবার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া পথে আহত দুজন মারা গেছে। ঢাকা মেডিকেলে আরও ১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ২৫ জন। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। সবাইকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এলএ)