ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন শাকিব খান

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ২২:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রহমত উল্লাহ নামে এক প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য রবিবার রাতে গুলশান থানায় গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নায়ক শাকিব খান। তার বিরুদ্ধে  অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন ওই প্রযোজক। এরই প্রেক্ষিতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি।

এরপর রবিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান দেশসেরা চিত্রনায়ক শাকিব খান। ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নায়ক।

তিনি বলেন, ‘রহমত উল্লাহ শুধু আমার সঙ্গেই নয়, তিনি দেশের মানুষের প্রতারণা করেছেন। যারা আমাকে পছন্দ করেন, এমন লাখো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমার নামে মিথ্যা, ভুয়া সংবাদগুলো সবার কাছে ছড়িয়েছেন।’

এই নায়ক বলেন, ‘আমার মনে হয় রহমত উল্লাহ এই কাজের পেছনে একা ছিলেন না। রহমত উল্লাহর পেছনে আরও অনেক লোক জড়িত ছিল। তিনি কোনো প্রযোজকই না, তার সঙ্গে কোনো ডিলও (চুক্তি) হয়নি। আমি সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি।’

দেশসেরা এ নায়ক বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রযোজক নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাই ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাই গুলশান থানায়। কিন্তু গুলশান থানার ওসি আমার মামলা নিলেন না। অনেক চেষ্টার পর, অনেক বোঝানোর পরও তিনি মামলা নিলেন না। এরপর তিনি বললেন, আপনি যেখানে খুশি গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ভুয়া প্রযোজক কীভাবে আমার নামে এসব অভিযোগ করেন? তিনি তো এই সিনেমার প্রযোজক না। তাই আমি দ্রুত তার বিষয়ে খবর নিয়ে মামলা করতে যাই। আমি জানতে পারি তিনি দু-এক দিনের মধ্যে দেশ ছাড়বেন।’

 ‘যেহেতু আমার মামলা থানায় নেয়া হলো না, তাই ডিবিতে আসা। আমি শুনেছি ডিবিতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়’—শাকিব খান যোগ করেন।

হতাশা প্রকাশ করে ঢালিউড অভিনেতা বলেন, আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও থানায় গিয়ে একটা মামলা করতে পারব না এইটা  আমার কাছে খুব আশ্বর্যজনক মনে হয়েছে। আমি গতকাল তাদের কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হয়েছি যে তারা এই প্রতারককে দেশ ছেড়ে যেতে সহযোগিতা করছে কি না? আমার কাছে এটা ডাউট হচ্ছে।

 

আপনি কী তাহলে মনে করছেন পুলিশ তাকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতারকে তারা পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে কিনা এটা আমার কাছে ডাউট হচ্ছে। আমি এখন এটা নিয়ে সন্দিহান।

তিনি আরও বলেন, তারা আগে তো মামলাটা নেবে, তারপর যাচাই বাছাই করবে। তথ্য উপাত্ত তারা দেখবে তারপর তো বলবে ভাই এই তথ্যে ভুল আছে এখানে আমরা তদন্ত করে দেখেছি। কিন্তু তারা তো তদন্তই করল না। তারা তো জিনিসটা আমলেই নিলেন না। 

ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ আশ্বস্ত করেছেন

গুলশান থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে মামলা নেয়নি পুলিশ। কিন্তু ডিবিতে যাওয়ার পর ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খানকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি প্রতারককে আইনের আওতায় আনবেন।

শাকিব বলেন, দীর্ঘ সময় দিয়ে তিনি ( ডিবির প্রধান হারুন) আমার সব কিছু শুনেন এবং সমস্ত এভিডেন্সগুলো দেখেন। এছাড়াও ওই প্রতারকের সমস্ত ক্লেমগুলো দেখেন। সমস্ত বিষয়গুলো কিন্তু তিনি খতিয়ে দেখেছেন। দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে। আমি কিন্ত এখানে অনেক সময় আগে এসেছি এবং তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যতো দ্রুত সম্ভব এই প্রতারককে তারা আইনের আওতায় আনবেন।

তিনি আরও বলেন, আমি শুনতে পারছিলাম এই প্রতারক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। আজ কালের মধ্যে পালিয়ে যাবে। দ্রততার সঙ্গে কিন্তু আমি থানায় গিয়েছিলাম। সেজন্য আমি ডিবির প্রধান যে হারুন ভাই, হারুন সাহেবকে ফোন দিই এবং তার সঙ্গে আমি এসে দেখা করি। তিনি আমাকে অনেক সময় দেন।

শাকিব বলেন, আমি তার কথা শুনে খুব আশ্বস্ত। আমার বিশ্বাস ডিবি যেমন অন্যান্য মামলাগুলো দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করেছে, দ্রুততার সঙ্গে ক্রিমিনাল ধরেছে, আমাদের ক্রিমিনালকে তারা দ্রুততার সাথে ধরবেন। আর আমার এই অভিযোগকে তারা দ্রুততার সঙ্গে আমলে নিয়ে এই ক্রিমিনালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ করেছি এবং তিনি আমার অভিযোগ নিয়েছেন। আমার সমস্ত কিছু তিনি দেখেছেন।

গত বুধবার (১৫ মার্চ) শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও ধর্ষণের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে চলচ্চিত্রের তিন সমিতিতে অভিযোগ করেন ‘অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ। লিখিত অভিযোগে তিনি দাবি করেন, অস্ট্রেলিয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে শাকিব গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শাকিবের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তদন্ত করেছে এবং প্রয়োজনে এ সম্পর্কিত নথি তিনি সরবরাহ করবেন।

এর একদিন পরই বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসলেন শাকিব খান এবং অভিযোগকারী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। এর উদ্যোগ নেন শাকিবের সাবেক স্ত্রী অপু বিশ্বাস। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। তবে এক টেবিলে বসলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এলএম/এসএস/ইএস)