কারা পাচ্ছেন নৌকার টিকিট, কৌশলে বার্তা দিচ্ছে আ.লীগ

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ১০:০৪ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সব চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে ক্ষমতাসীন দলটি। এরইমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ কাজও শেষ হয়েছে।

বর্তমান সংসদ সদস্যদের পারফরম্যান্স ও তাদের কৃর্তকর্মের আমলনামা যুক্ত করে জরিপের রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য বারের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও সারাদেশের সকল এমপি ও সাবেক এমপি, সম্ভব্য এমপি প্রার্থীদের কৃতকর্মের আমলনামাসহ তাদের নামের তালিকা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংস্থা একাধিক প্রার্থীর যে জরিপ রিপোর্ট দিয়েছে তার মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্যের নাম লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের একাধিক নামের তালিকা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপি হয়েও যারা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন এমন অর্ধশতাধিক এমপির বদলে খোঁজা হচ্ছে নতুন জনপ্রিয় মুখ।

সেইক্ষেত্রে যাদের এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে এবং দলের জন্য নিবেদিত, দলবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না, এমন নেতাদের বাছাই করবে দলটি। এজন্য একই আসনেও একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থীর নামের তলিকাও করা হয়েছে।

আর যারা দলে থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বা দাঁড় করিয়েছেন নির্বাচন উপলক্ষে তাদের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখবে কেন্দ্রীয় কমিটি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য জানান, লাল তালিকায় অর্ধশতাধিক এমপির সঙ্গে আরও অর্ধশতাধিক তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতার নামও আছে। গতবার দল থেকে মনোয়ন চেয়ে না পেয়ে পরে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করেছে ও দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় ছিল তাদের নামই রয়েছে ওই তালিকায়।

এছাড়া যে সকল এমপি ও নেতারা দলের বিরদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে বা নিজে প্রার্থী হয়েছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করে দলের ইমেজ নষ্ট করেছের বা এমপি হওয়ার পরে নির্বাচনী এলাকায় যাননি, উন্নয়ন অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমপি ও নেতার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বলছে, বিভিন্ন সময় যারা বিতর্কের জন্ম দিয়ে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে বহিস্কৃত হয়েছে। পরবর্তীতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা পেয়েছেন। এমন প্রায় সাত শতাধিক নেতার ওপর কড়া নজর থাকবে কেন্দ্রীয় কমান্ড। ক্ষমা পাওয়া এই নেতারা ফের শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, তিন শ আসনেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পাঁচ স্তরে যাচাইবাছাই করে একাধিক প্রার্থীর নাম ঠিক করা হচ্ছে। এই সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। এরমধ্যে অধিকাংশ আসনেই এলাকায় জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের একাধিক প্রার্থীর নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ এমপিরাই এখন তাদের নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারাও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন কমসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

একইভাবে গত জাতীয় নির্বাচনে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত তারাও এলাকায় সক্রিয় হয়ে এমপিপ্রার্থী বলে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আবার গত চার বছর যারা এলাকায় আসেননি তেমন নেতারাও নির্বাচনকে সামনে রেখে সভাসমাবেশ করে শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রগতি তুলে ধরে নজরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। নৌকার মনোনয়ন কে পাবেন সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানেন। তবে দলের মধ্যে থেকে যারা বিভিন্ন বির্তকিত কাজে জড়িয়েছে তাদের বিষয় আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে আছে।’

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, দলে থেকে যারা বির্তকের জন্ম দিয়েছে এমন কাউকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে না। এলাকায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে আর দলের জন্য নিবেদিত ব্যক্তিকেই আওয়ামী লীগ খুঁজে নেবে।’

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/ডিএম)