ব্যাংকে নিয়োগের প্রশ্নফাঁস: কারাগারেই যেতে হলো বুয়েট অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরকে

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ১৪:৩০ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩, ১৪:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মামলায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. নিখিল রঞ্জন ধরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২০ মার্চ) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরির আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন নিখিল রঞ্জন ধর।

জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিন ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলা বদলি মূলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন নিখিল রঞ্জন ধর। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।

এ মামলায়  গত ৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। সে সময় নিখিল রঞ্জন ধর পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

গত ৫ মার্চ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান নিখিল রঞ্জন ধর।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর শামীম আহমেদ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

প্রশ্নফাঁসের এ মামলায় বুয়েট শিক্ষক নিখিল ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন, প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল, জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা শামসুল হক শ্যামল, আব্দুল্লাহ আল জাবের, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী রবিউল আউয়াল, পারভেজ মিয়া, মিজানুর রহমান মিজান, মোবিন উদ্দিন, সোহেল রানা, পরীক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপন, রাশেদ আহম্মেদ বাবুল, জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ ও রবিউল ইসলাম রবি।

২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ব্যাংক নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ওই মামলায় দায়ের করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি অধ্যাপক নিখিলের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শামীম আহমেদ।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরকে ‘পলাতক’ দেখিয়েছেন এবং কোনো আদালত থেকে জামিন না নেয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করেন।

নিখিল রঞ্জন বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর তাকে বিভাগের প্রধান থেকে অব্যাহতি দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির অধীনে অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের ওই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন। তবে পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থীরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের খবর প্রকাশিত হওয়ায় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নেমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া ও প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানায় ডিবি।

আহ্‌ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন দেলোয়ার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে দেলোয়ার বলেন, আশুলিয়ায় তাদের ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপার পর দুই সেটের দুটি প্রশ্ন নিয়ে নিতেন বুয়েট অধ্যাপক নিখিল।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/এআর)