কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জিএম কাদের

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ১৯:১৮ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩, ১৯:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর কাকরাইলে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পল্লীবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে স্বাভাবিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

তিনি বলেন, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনকে সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় বা এমন কাঠামোতে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা এমনই রাখবে নাকি কিছু পরির্বতন করবে তা আমরা এখনই জানি না। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্বাচনের আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

 

সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে কাকরাইলস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর জন্মদিনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পল্লীবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।

 

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রীক সংকট শুরু হয়ে গেছে। দুটি দল নিজের অবস্থানে অটল আছে। এমন অবস্থা থেকে তাদের বেরিয়ে আসার কোন উপায় নেই। দল দুটি মনে করছে, তারা ছাড় দিলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা ভাবছে, ছাড় দিলে নির্বাচনে তারা টিকবে না এবং তাদের রাজনীতি টিকবে না। তাই, সামনের দিকে বাঁচার জন্য দুটি দল জীবনপণ লড়াই করবে। সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছে।

 

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশ চালানো হচ্ছে গোঁজামিল দিয়ে। অগ্রগতির কথা বলে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থের অভাবে দেশের স্বাভাবিক আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসীদের আয় এবং রফতানী থেকে যে আয় হয় তার চেয়ে দেশের ব্যয় অনেক বেশি। দেশের রিজার্ভ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। এ কারণেই আমরা আমদানী করতে পারছি না, আমদানী অর্ধেক হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না, নিত্যপণের দাম বেড়ে গেছে। অষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একারণে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। একারণে, সরকার আমদানী কমিয়ে দিয়ে, ধার-কর্য করছে এবং বাকিতে মালামাল কিনছে। এটাকে আমারা গোঁজামিল দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে বলে মনে করছি।

 

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, উন্নয়নের নামে আমরা যা দেখছি বিশাল বিশাল অবকাঠামো হচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। এর সুফল আমরা এখনো দেখিনি। গেলো বাজেটের সময় ঋনের ভার জনপ্রতি ছিলো প্রায় ১ লাখ টাকা। এখন ঋনের বোঝা আরো বাড়বে। সরকারের হাতে টাকা নেই। এমন বাস্তবতায় সরকার নতুন করে ১ লাখ কোটি টাকা ছাপাচ্ছে। এজন্য দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি ও মুদ্রাস্ফিতি হচ্ছে। ডলার সংকট চলছে। সরকার রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে তা আইএমএফ এর হিসেব অনুযায়ী অনেক কম। সরকার বলেছে রির্জাভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। আইএমএফ বলছে এখানে অন্তত ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার নেই। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় ঋণ দেয়া হয়েছে এবং লগ্নি করা হয়েছে। সেই হিসেবে রির্জাভের পরিমাণ ২২ দশমিন ৫ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা। কিন্তু, এবছর ঋণ ও আসল পরিশোধ করতে হবে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সরকারি হিসেবে বকেয়া ১৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি এবং ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে এখনই শোধ করতে হবে। অতিতের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে সরকারের হাতে কোন টাকা থাকার কথা নয়। আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ঋণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, তারা আমাদের ঋণ না দিলে দেশ যে কোন মুহুর্তে দেউলিয়াত্বের মধ্যে চলে যেতে পারে। উন্নয়নের নামে বড় বড় মেগা প্রকল্প হয়েছে, গুটি কয়েক মানুষ লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য অশুভ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার জোড়াতালি দিয়ে এবং ধার করে দেশ চালানোর চেষ্টা করছেন। উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলে প্রতিদিন দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরোনের জন্য আমাদের সুপারিশমালা আছে আমরা তা সময় মত জানাবো। আমাদের শুপারিশমালা যদি গ্রহণ করার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবেই আমরা সুপারিশমালা দেবো। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। অনেক শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য মানুষ প্রতিদিন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন।

 

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, উত্তরের আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু , এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আকতার এমপি, মোস্তফা আল মাহমুদ, আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল ইসলাম জহির, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে- জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় মহিলা পার্টি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, জাতীয় তরুণ পার্টি, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টি, জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় হকার্স পার্টি, পল্লীবন্ধু পরিষদ , ফ্রান্স শাখা জাতীয় পার্টি।

 

এছাড়াও আজ দুপুরে চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছেন। এসময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর মহানগর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া রচিত “রাজনীতির ষাট বছর” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। এসময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব সহ পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হক মনি গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। 

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন উদযাপন

সোমবার (২০ মার্চ) সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম শুভ জন্মদিন। এই উপলক্ষে বেলা ১২টায় আমির টাওয়ারে দোয়া মাহফিল ও কেক  কেটে জম্মদিন উদযাপন করেছে শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টি 'র সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও জাতীয় পার্টি মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়্যারম্যান সালমা হোসেন, আমির উদ্দিন ডালু, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক শেখ মাসুক রহমান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুজন দে, শ্যামপুর থানার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম মোল্লা সহ জাতীয় পার্টি সিনিয়র নেত্ববৃন্দ।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/জেবি/কেএম)