পুতিন-শির হাত ধরে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট!

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২৩, ১৪:১২

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে নতুন যুগের শুরু হতে যাচ্ছে? দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা তাদের সম্পর্কের ‘নতুন যুগকে’ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছেন তাতে এমন ভাবনা মোটেও অমূলক নয়।

মস্কো সফরে রয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সফরের দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের নেতা মস্কোতে একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে সম্পর্কের এই নতুন যুগকে স্বাগত জানান। এদিকে ইউক্রেন সংঘাত অবসানে বেইজিংয়ের শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমাবিশ্বকে দায়ী করেন।

পশ্চিমা শক্তির লাগাম টেনে ধরতে আগ্রহী দেশগুলো এশিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তারা অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। ইউক্রেনে পুতিনের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এটি আরো জোরালো হয়েছে।

পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেনের বিষয়ে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত ছিলেন এবং সংঘাতের বিষয়ে বেইজিংয়ের ১২ দফা প্রস্তাব পত্রের প্রশংসা করেছেন যার মধ্যে সংলাপ এবং সকল দেশের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।

শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার পর পুতিন বলেন, ‘চীনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অনেক বিধান একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে যখন কিয়েভ এবং পশ্চিমারা এর জন্য প্রস্তুত হবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তাদের পক্ষ থেকে এমন কোন প্রস্তুতি দেখিনি।’

আলোচনার পর রাষ্ট্রীয় এক নৈশভোজে পুতিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে রাশিয়া-চীন সহযোগিতার সত্যিই সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে।’ সেখানে তিনি রাশিয়া ও চীনের জনগণের ‘সমৃদ্ধির’ কথা তুলে ধরেন।

এরআগে তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে এ দুই দেশের সম্পর্কের ‘বিশেষ প্রকৃতি’ নিয়ে কথা বলেন। মস্কো সফরের দ্বিতীয় দিনে শি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ‘নতুন যুগে প্রবেশ করছে।’

পুতিন আলোচনাকে ‘অর্থপূর্ণ এবং খোলামেলা’ বলে অভিহিত করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইউরোপীয় বাজার থেকে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া রাশিয়া জ্বালানি পাওয়ার ক্ষেত্রে চীনের ‘ক্রমবর্ধমান চাহিদা’ মেটাতে সক্ষম হবে।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ চীনকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং তারা বেইজিংয়ের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা চীনকে শান্তির ফর্মুলা বাস্তবায়নে অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা সকল চ্যানেলে আমাদের ফর্মুলাটি বলে দিয়েছি। আমরা আপনাকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা আপনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।’

তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, চীন একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হতে সক্ষম হবে বলে ওয়াশিংটন মনে করে না। এ সংঘাত অবসানের প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতাকারী হওয়ার বেইজিংয়ের এমন লক্ষ্যের কঠোর সমালোচনাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিগত বছরগুলোতে মস্কো ও বেইজিং তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে এবং উভয় দেশ মার্কিন আধিপত্যকে প্রতিহত করার ইচ্ছা পোষণ করে।

চীনের নেতার মস্কো সফরকে পুতিনের জন্য একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, পুতিনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানা রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কিয়েভ সফরকালে তার সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ করেছেন। তিনি ইউক্রেনের বুচা শহর সফর করেন। সেখানে রাশিয়ার বাহিনীর এক বছরের দখলদারিত্ব চলাকালে নৃশংসতা চালানোয় তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়।

জেলেনস্কি তার সান্ধ্যকালীন ভাষণে বলেন, ‘মি. কিশিদার সঙ্গে আমাদের আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ ছিল। রাশিয়ার আগ্রাসন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশ্বকে আরো সক্রিয়ভাবে সংগঠিত করতে আমাদের সাথে একত্রে কাজ করার জন্য আমি জাপানের অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ইচ্ছার কথাও শুনেছি।’

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/ডিএম)