রকিবের হুকুমেই গাড়ির শোরুম ভাঙচুর, দায় চাপানো হয় পুলিশ-জমির মালিকের ওপর

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২৩, ২১:৩১ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকারের সনি রাজ কার প্যালেস নামে গাড়ির শো-রুম ভাঙচুরের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জমির প্রকৃত মালিককে ফাঁসাতে নিজের গাড়ির শো-রুম নিজেই ভাঙচুর করান রকিব। তার নির্দেশে সনি রাজ কার প্যালেসের কর্মচারীরা এ ভাঙচুর চালান। পরে ফেসবুক লাইভে এসে উল্টো হামলার দায় চাপানো হয় পুলিশ ও জমির মালিক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের ওপর।

গত শুক্রবার গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ সংলগ্ন গাড়ির শো-রুমে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একইদিন ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের ওপর দায় চাপান নায়িকা মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর বদরে আলম সরকারি কলেজ সংলগ্ন জমি দখল করে রকিব সরকার সনি রাজ কার প্যালেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। জমির প্রকৃত মালিক মো. ইসমাইল হোসেন লাদেন ও মো. মামুন সরকার। ১৭ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার তাদের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য সেখানে যান। এসময় জমিতে নির্মাণ কাজ করতে গেলে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে এবং জমির মালিকদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তাদেরকে মারধর করা হয়।

ঘটনা ভিন্ন দিকে নিতে রকিব সরকারের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপাতে নিজেদের শো-রুমের চেয়ার ও গ্লাস ভাঙচুর করে। যা সৌদি আরব থেকে নির্দেশ দেন রকিব-মাহি দম্পতি। মারামারির সংবাদ পেয়ে বাসন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি শান্ত করেন।

পুলিশ এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলে রকিব তার স্ত্রী মাহিয়া মাহির ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। এ সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে ফিরে তাদের দেখে নেব। পুলিশ কমিশনার রকিব সরকারের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন।’

এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ আনায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাসন থানায় মামলা হয়। পুলিশ বাদি হয়ে মামলাটি করে। এছাড়া ব্যবসায়ী ইসমাইল বাদি হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। শনিবার সৌদি আরব থেকে মাহি দেশে ফিরলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাকে দুই মামলায় জামিন দেন। এর একদিন পর দেশে আসেন রকিব সরকার। তিনিও আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

জমি নিয়ে বিরোধ যেভাবে

জানা গেছে, হাজী নুরুর ছেলে ইসমাইল হোসেন লাদেনের নামে আলম সরকারি কলেজ সংলগ্ন সাড়ে ৩২ শতাংশ জমি ছিল। ওই জমি এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলেন স্টিল কিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। ইসমাইল ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জামানত নিয়েছিলেন এক কোটি ৫ লাখ টাকা।

পাঁচ বছর আগে ইসমাইল হোসেন ২১ শতাংশ জমি মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকারের আত্মীয় আবদুল খালেক সরকারের ছেলে মামুন সরকার, সুমন সরকার ও বাবুর কাছে বিক্রি করেন। বাকি ১১ শতাংশ জমি নিজে ভোগদখল করেন। যারা জমি কিনেছিলেন তারা ভবন করার পরিকল্পনা করেন। এ অবস্থায় জমির পেছনের অংশে থাকা স্থাপনা সরিয়ে সেটি খালি করা হয়।

২০১৮ সালের শেষ দিকে রকিব সরকার তার স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে জমিটি দখল করে নেন। রকিব সরকার ও তার ভাইদের ওই এলাকায় প্রভাব থাকায় জমির প্রকৃত মালিক ইসমাইল হোসেন ও যাদের কাছে তিনি ২১ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিলেন তারাও জমি উদ্ধার করতে পারেননি। এরপর রকিব সরকার ওই জমিতে ‘সনি রাজ কার প্যালেস’ নামের একটি গাড়ির শো- রুম চালু করেন। জমির উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কারও কোনো সহযোগিতা পাননি। যা একসময় পুরোপুরি রকিব সরকারের দখলে চলে যায়। এমনকি ওই সম্পত্তি নিজের দাবি করে রকিব সরকার আদালতে মামলা করেন। তবে আদালত জমির প্রকৃত মালিক সুমন সরকার, ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকারদের পক্ষে রায় দেন।

অভিযোগের অন্ত নেই রকিবের বিরুদ্ধে

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে বিয়ে করে আলোচনায় আসা রকিব সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলাও। তবে অর্থ আর ক্ষমতার জোর খাটিয়ে তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজধানী লাগোয়া শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে রকিবের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আছে হত্যা, ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারসহ অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রকিব সরকারের পরিবার বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা। তবে তিনি টাকার জোরে বনে গেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। এই পরিচয়ে তিনি করছেন একের পর এক অপকর্ম। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, যার জমিতেই রকিবের নজর পড়ে সেটাই তিনি দখল করেন। রকিবের বিরুদ্ধে থাকা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনসহ ডকেট আদালত থেকে উধাও হয়ে গেছে। এসবই তিনি করেছেন ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।

কে এই রকিব সরকার?

১৯৮২ সালে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ১৫নং ওয়ার্ডের ভোগড়ায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব সরকার। তার বাবার নাম সামছুদ্দিন সরকার। রকিব সরকারের বড় ভাই সুলতান সরকার। তিনি গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবহন সেক্টরে বড় চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে তিনি পরিচিত।

রকিবের আরেক ভাই ফয়সাল আহমেদ সরকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক এবং গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আরেক ভাই কামরুল আহসান সরকার গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকার ও শওকত সরকারও তাদের নিকটাত্মীয়।

রকিবের বিরুদ্ধে যেসব মামলা

রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ইনতুজা আক্তার রূপা নামে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ আছে। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল রকির তার সহযোগী আরেফিন খান মৃদুলের বাড়িতে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-১৪৭, তাং-২৭/০৪/২০১৭। ধারা- ৯(৩)/৩০,২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন- ২০০৩)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ থাকলেও ক্ষমতার জোরে রকিব সরকার মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন বদলে দিয়েছেন।

থানা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রনি সরকারের ‘সরকার ক্যাবল ভিশন’ নামে ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন আমির হামজা। রকিব সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ী রনির মধ্যে ডিস ও ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল। ডিস ও ঝুটের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রকিবের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আমির হামজাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে রকিব রনি সরকারকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় ম্যানেজার আমির হামজাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর রকিরের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন অজ্ঞাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমির হামজাকে টেনে হিচড়ে সরকার ক্যাবল ডিস অফিস থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে নলজানি টিএন্ডটি রোডের পাশে জাইকা ড্রেনের কাছে ভিকটিমের রক্তের তাজা দাগ দেখতে পায় পুলিশ। সন্ত্রাসীরা আমির হামজাকে মারপিট, জখম ও কুপিয়ে ওই জায়গায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগে রকিব সরকারকে এক নম্বর আসামি করে নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম জয়দেবপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। জয়দেবপুর থানার মামলা নম্বর ৭১; তারিখ ১২/১০/২০১৭। ধারা-১৪৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪।

অভিযোগ আছে, রকিব সরকার ও তার ভাইদের চাপে এ মামলা তদন্তে গতি স্থিমিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হত্যা মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর রনি সরকারকে ফাঁসাতে নির্মাণাধীন ভবনের একটি রুমে সহযোগীদের মাধ্যমে দুটি অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা করের রকিব। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পিস্তল দুটি উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ভবনের মালিক রনি সরকারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে রনি ও রকিবের মধ্যে ডিস ও ঝুটের ব্যবসা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তার সহযোগী রাজিব সরকার সবুজ ও জোবায়ের হোসেন শুভর মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সেখানে রাখা হয়। পরে পুলিশ বাদি হয়ে রকিবকে এক নম্বর আসামি করে জয়দেবপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে। পরে রকিবকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। জয়দেবপুর থানার মামলা নম্বর-৫৯। তারিখ-১/১০/২০১৭। ধারা-১৮৭৮ সলের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ও ১৯(এফ)।

কিন্তু ক্ষমতা আর অবৈধ অর্থের জোরে রকিব সরকার তার মামলার কার্যক্রম স্থিমিত করে দেয় মর্মে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। সূত্র বলছে, রকিব সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ‘ফাইনাল রিপোর্ট’, ‘ডকেট কপি’ আদালত থেকে উধাও হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিক বার একাধিক সময়ে ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও রকিব সরকারের সাড়া পাওয়া যায়নি।

যার জমিতে নজর পড়ে সেটাই দখল করেন রকিব

রকিবের বিরুদ্ধে বাসন ও সদর থানা এলাকায় অনেক জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের পূর্ব পাশে এবং জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর পাশে ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন লাদেন ও মামুন সরকারের সাড়ে ৩২ শতাংশ জমি পাঁচ বছর ধরে দখল করে সেখানে ‘সনি রাজ কার প্যালেস’ নামে একটি গাড়ির শো-রুম গড়ে তোলেন। জমির প্রকৃত মালিক নিজের জমির পক্ষে আদালত থেকে রায়ও এনেছেন। কিন্তু এরপরও তিনি দখল পাচ্ছেন না। তাকে প্রায় হুমকি দিয়ে আসছে রকিবের সন্ত্রাসী বাহিনী। আবার রকিব দাবি করেছেন, তাকে দেড় কোটি টাকা দিলে তিনি জমির দখল ছাড়বেন। প্রায় রকিবের লোকজন ইসমাইলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।

অভিযোগ আছে, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল সড়কের কাশেম টেক্সটাইল সংলগ্ন তিন বিঘা জমি রকিব সরকার দখল করে রেখেছেন। জমির মালিক বাবুল ও তার স্বজনরা। তারাও রকিব বাহিনীর ভয়ে তটস্থ।

এছাড়া বাসন থানাধীন চিটাগং রোডের মোগড়খাল রাস্তার উত্তর পাশে বিধবা রহিমা বেগমের মালিকানাধীন প্রায় ১০ শতাংশ জমি রকিব দখল করে রেখেছেন। বহু মানুষের কাছে ধর্না দিয়েও রহিমা তার জমির মালিকানা বুঝে পাচ্ছেন না। তাছাড়া সদর থানাধীন বিলাশপুরের শিমুলতলী রোড সংলগ্ন পূর্ব পাশে একজন অসহায় ব্যক্তির ১৩ শতাংশ জমি রকিব দখল করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতে ভয় পান স্থানীয়রা। কারণ, বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তার আত্মীয়। তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে রকিব দীর্ঘদিন এসব অপরাধ করছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগানোর অভিযোগ আছে। তাছাড়া রকিবের ভাই সুলতান সরকারের পরিবহন শ্রমিকদের ব্যবহার করে এসব সাধারণ ভূক্তভোগীদের ওপর হামলারও ঘটনা ঘটেছে।

থানা পুলিশ জানিয়েছে, রকিব ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তবে ভয়ে কেউ সরাসরি কথা বলেন না। আবার কেউ অভিযোগ দিলে তার জন্য এলাকায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। পুলিশ তাদের অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের চেষ্টা করলে সুলতান সরকারের (রকিবের ভাই) সহযোগিতায় পরিবহণ শ্রমিকদের দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। এতে থানা পুলিশ রকিব সরকার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনেক ক্ষেত্রে পিছু হটতে বাধ্য হয়।

গাজীপুর মহানগরীর কৌশলগত গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড়। রকিব পরিবারের কারও বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিক ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা সড়ক অবরোধ করে।

রকিবের সাঙ্গপাঙ্গদেরও দাপট

রকিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- মশিউর রহমান সিপাহী, আলমগীর ও সাইফুল ইসলাম। গাজীপুর মহানগরীতে প্রতিনিয়ত মাদক সরবরাহে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করে আসছেন।

ঝুট পণ্য না পেলেই কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ করান

গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব গার্মেন্টেসের ঝুট নিয়ন্ত্রণ করেন রকিব সরকার ও তার লোকজন। ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও করেন। বাসন থানার ল্যাডন্ডার গার্মেন্টস, বটস গ্যালারি, লালতাপুর গার্মেন্টস, হাসান তানভীর ফ্যাশন, লিরিক ফ্যাশন টার্গেট, নেটওয়ার্ক ডটকম, মিকি গার্মেন্টস, স্কয়ার, টি অ্যান্ড জেড গার্মেন্টস তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে।

জানা গেছে, রকিব সরকারের প্রতিমাসে ঝুট নিয়ন্ত্রণে নেন। কোনো গার্মেন্টস মালিক বা কর্তৃপক্ষ ঝুট দিতে অস্বীকৃতি জানালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কে দেওয়া হয়। তাছাড়া বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে মালিক পক্ষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। এই ঝুট থেকে প্রতি মাসে ৭০-৮০ লাখ টাকা আয় করেন রকিব। তার ঝুটের ব্যবসা দেখভাল করেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরিফ, নাজমুল ও আলমগীর।

চাঁদাবাজিসহ সব অপরাধেই রকিব

গাজীপুর মহানগরীতে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টিসহ নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত রকিব সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাসন থানা এলাকাসহ মহানগরীর প্রায় সব ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁদা নেন রকিব। এছাড়া ভোগড়া বাইপাস ফলের আড়ৎ (সামছুদ্দিন সুপার মার্কেট) এবং কাঁচা বাজারের ট্রাক-পিকআপ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা নেন। এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ গাড়ি লোড-আনলোড হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/এসএস/ইএস)