রমজানের বাজার: নিত্যপণ্যের দামে অসন্তোষ, কমেছে মুরগি বিক্রি

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ২০:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাত পোহালেই শুরু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। রমজানকে সামনে রেখেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও ভিড় বেড়েছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে। তবে দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বাজারে স্বাভাবিক দামেই বেচা-বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য। তবে বাড়তি দামের কারণে মুরগি বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও (বিএনপি) বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা কেজি ৫০ টাকা, মিনিকেট ৭০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত, পোলাও চাল খোলা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, প্যাকেট কেজি ১৫৫টাকা, ভেসন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মোটা দানা মশুর ডাল ১০০ টাকা, দেশি ছোট মশুর ডাল ১৩৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  সাদা চিড়া ৬৫টাকা কেজি, লাল চিড়া কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৭ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৭৪ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটার ১৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা লিটার দরে।

এছাড়া লবণ এক কেজির প্যাকেট ৪২টাকা কেজি, খোলা লাল চিনির কেজি ১৩০টাকা, সাদা চিনি ১১২, দুই কেজির প্যাকেট আটা ১৩০টাকা, দুই কেজি ময়দা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্রয়লারের কেজি ২৫০ টাকা, লেয়ার ৩২০টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৭০টাকা, দেশি মুরগি ৭০০টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি দোকানি রবিউল শেখ ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাজার থেকে আমাদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও লাভ করা লাগবে। বেশি দামে কেনা লাগছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে দাম বৃদ্ধির কারণে মুরগির বিক্রি অনেক কমে গেছে বলেও জানান তিনি।

ক্রেতা রায়হান মোল্লা বলেন, দেশে সবকিছু দাম বাড়ছে। ছোট থেকে বড় সব ব্যবসায়ী এই দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেটে জড়িত। খুচরা ব্যবসায়ীদের বলতে তারা বলে পাইকাররা বেশি নিচ্ছে। পাইকাররা আবার বলে আমরা দাম কম নিচ্ছি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি নিচ্ছে। দুই দল দুজনকে দোষ দেয়। অথচ মাঝ থেকে বলির পাঠা হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।

এদিকে রুই ও কাতল মাছ কেজি ২৮০ থেকে ৩৫০টাকা, মাজারি ইলিশ ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০টাকা, পাপদা ৩৫০ থেকে ৫০০টাকা, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৪০টাকা, ট্যাংরা ৬০০টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০টাকা, কই ২৬০টাকা চিংড়ি ৫৬০ থেকে ৭৫০ টাকা, জাপানি পুটি ২০০টাকা এবং ছোট বাইন মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে টমেটো ৫০টাকা, কচু লতি ১০০টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০টাকা, ভেন্ডি ৮০টাকা, গাজর ৫০টাকা, শসা ৬০, মুলা ৫০, চিচিংগা ৮০, বরবটি ১০০ টাকা, উচ্ছে ৮০, করোলা ৮০, লাউ ১০০ থেকে ১২০, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ৪০টাকা, ছোট ফুলকপি ৫০, পাতা কপি ৪০, লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১০০, গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০, পেপে ৩০, কাচ কলা ৪০, সিম ১৫০, পটল ৮০, সজিনা ডাটা ১৬০, চায়না আদা ২৫০, দেশি আদা ১৫০, চায়না রসুন ১৫০, দেশি রসুন ১০০ পিঁয়াজ ৪০ টাকা এবং লেবু ৪০টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রমজান উপলক্ষে বাজার করতে আসা মো. শফিক উল্লাহ বলেন, কাল থেকে রমজান শুরু হচ্ছে। অফিসের কারণে বিভিন্ন সময়ে বাজার করতে পারি না। আজ সময় পেয়েছি বলে বাজারে এসেছি। বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে যে টাকা নিয়ে এসেছি ১০ দিনের বাজারও হবে না মনে হচ্ছে। কতদিন আর এভাবে চলবো। সবকিছুর দাম যে হারে বাড়ছে তাতে কিছুদিন পরে না খেয়ে থাকতে হবে। গরিব মানুষের মরা ছাড়া কোনো গতি নেই।

সবজি বিক্রেতা মনসুর শেখ বলেন, হিসাব অনুযায়ী কাঁচা সবজির দাম বাড়েনি বললে চলে। কারণ  বছরজুড়েই তো সবকিছুর দাম বেশি। সেই বেশি দামেই এখনও বিক্রি হচ্ছে। তবে রমজান উপলক্ষ্যে  আলাদাভাবে দুয়েক দিনের মধ্যে কোনো কিছুর দাম বাড়েনি।

রাজধানীর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শেখ সাদি। থাকেন একটি ম্যাচে। রমজান উপলক্ষে বাজার করতে এসেছেন। তিনি বলেন, গত বছরও ম্যাচের সবাই টাকা দিয়ে ইফতার সেহেরির জন্য যেসব খাবার লাগে সেগুলো একবারে কিনে রেখেছিলাম। রোজা থেকে বাজারে যেতে ভালো লাগে না। তবে এবার বাজারের যে অবস্থা কোনো কিছুই দুই দিনের বেশি কেনার সামর্থ নেই। দুইটা টিউশনি করিয়ে নিজের খরচে ঢাকায় থাকি। কিন্তু আস্তে আস্তে যে দিন আসছে কতদিন আর থাকতে পারবো বলতে পারি না।

বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের মধ্যে হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে।  

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/কেআর/কেএম)