মুন্সীগঞ্জে জোড়া খুন: পারিবারিক কলহে স্ত্রী-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ২২:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার বহুল আলোচিত মা মেয়ে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই) মুন্সীগঞ্জ জেলা। এ ঘটনায় শাহিন পাহাড় নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। পিবিআইয়ের দাবি, পারিবারিক কলহের জেরেই নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে শাহিন। বৃহস্পতিবার বিকালে পিবিআইয়ের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানার মুরাদপুরের মাদ্রাসা রোডের ১৫০ নম্বর মো. মজিবুর রহমানের বাড়ির নিচ তলার উত্তর পাশের রুম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ৮ মার্চ মামলার বাদী শ্রীনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আপন কুমার মজুমদার ও অন্য ফোর্সসহ শ্রীনগর থানা এলাকায় ডিউটি করার সময় খবর পেয়ে ব্রাহ্মন পাইকশা গ্রামের আদিল ও জামাল বেপারীর বাড়ির মধ্যবর্তী শাহাদাত হোসেন নাসিরের মালিকানাধীন পানিযুক্ত জমিতে উপস্থিত হয়ে লেপ দিয়ে মোড়ানো ও প্রিন্টের বিছানার চাদর দিয়ে বাধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা একজন নারী ও ও অজ্ঞাতনামা মেয়ে শিশুর লাশ উদ্ধার করে। পরে তিনি ১০ মার্চ শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ২৫ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে মামলাটির তদন্তভারের দায়িত্ব পিবিআই নেয়। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধান ও সার্বিক নির্দেশনায় এবং মুন্সীগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকের তদারকিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শাহীনূর আলম মামলাটি তদন্ত করেন।

পিবিআই জানায়, শাহিন প্রথমে নার্গিস নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। এরপর প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে নিহত রিম্পা খাতুনকে বিয়ে করেন। শ্রীনগর থানার মধ্য কামারগাঁও গ্রামের আলাদা বাসা ভাড়া করে বসাবাস করতে থাকে। এরমধ্যে শাহিনের ঔরষে এবং ভুক্তভোগী রিম্পা খাতুনের গর্ভে মেয়ে সন্তান ভুক্তভোগী আমেনা জন্ম নেয়। শাহিনের প্রথম স্ত্রী নার্গিস তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানতে পারে। এই নিয়ে শাহিনের সাথে নার্গিসের মনোমালিন্য ও ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। এরপরে শাহিন পাহাড় তার দ্বিতীয় স্ত্রী রিম্পা খাতুনকে তার গ্রামের বাড়ি পাবনায় চলে যেতে বলে। কিন্তু রিম্পা খাতুন পাবনা যেতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শাহিন পাহাড় প্রথমে রিম্পা খাতুনকে দুই হাত দিয়ে নাক, মুখ, গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার নয় মাস বয়সী মেয়ে আমেনা খাতুনকে একইভাবে হত্যা করে। পরে তাদের লাশ দুইটি লেপ দিয়ে মুড়িয়ে ও প্রিন্টের বিছানার চাদর দিয়ে বেঁধে বাসা তালা দিয়ে উত্তর বালাশুরের বাড়িতে প্রথম স্ত্রীর কাছে চলে আসে। পরে আবারও ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আর শাহিনের একই এলাকার মিশুকচালক হাসেমের সাথে দেখা হয়। মিশুকচালক হাসেমের কাছে হত্যার ঘটনা গোপন করে কুমারপাড়া গ্রাম থেকে কিছু লেপ তোশক আনবে বলে তার মিশুক ভাড়া করে। ওইদিন রাত নয়টার দিবে লাশ আনতে রওনা হয়। রাত ১০টার দিকে বাসা থেকে লেপ ও বিছানার প্রিন্টের চাদর দিয়ে মোড়ানো বাঁধা অবস্থায় লাশ নিয়ে মিশুকে উঠায়। আর মিশুকচালক হাসেমকে বুঝতে না দিয়ে তাকে কোলাপাড়ার দিকে যেতে বলে। পরে ব্রাহ্মন পাইকশা এলাকায় তাদের লাশ পানিযুক্ত জমিতে ফেলে দেয়।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক জানান, গ্রেপ্তারকৃত শাহিন পাহাড়কে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত শাহিন পাহাড় মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার উত্তর বালাসুর গ্রামের তৈয়ব পাহাড়ের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এএ/এলএ)