স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসী কাদরী

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ২২:২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী  ড. ফিরদৌসী কাদরী গবেষণা এবং প্রশিক্ষণে তার অসামান্য অবদানের জন্য বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক ২০২৩ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নয়জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ড. কাদরীকে এই বছরের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে ভাষণ প্রদানের সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

ড. কাদরী তার বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের দুটি বিশেষ কারণে, এক- বাংলাদেশ সরকার আমাকে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। আর দুই- এই পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই, যিনি ২০১৯ সালে দি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি কর্তৃক ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত। যে অ্যাওয়ার্ডটি টিকাদানের মাধ্যমে লাখ লাখ শিশুর জীবন বাঁচানোর বৈশ্বিক প্রয়াসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন তাদেরকে দেওয়া হয়।

ড. কাদরী তার বক্তব্যে ধন্যবাদ জানান তার দীর্ঘ চার দশকের পথ চলায় পাশে থাকা, দেশে বিদেশের অসংখ্য সহকর্মী, শুভাকাঙ্খী, পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, আইসিডিডিআরবি এবং এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদকে।

তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া মানুষের জন্য কাজ করা আমার একার পক্ষে সম্ভব হতো না। আমার সকল অর্জনের সমান অংশীদার আপনারাও।

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী  বলেন, প্রতিটি পুরস্কারই আমাকে নতুন কিছু নিয়ে কাজ করতে উদ্দীপ্ত করে তবে আজকে যে সম্মানে আপনারা আমাকে সম্মানিত করলেন তা নিশ্চিতভাবে দেশ ও মানুষের জন্য ভবিষ্যতে আরও কাজ করার পেছনে অনুপ্রেরণা হিসবে কাজ করবে।

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ ড. কাদরীকে তার এই অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই সম্মাননা বাংলাদেশে এবং বিশ্বে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের অগ্রগতির জন্য ড. কাদরীর অক্লান্ত প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি। ড. কাদরীর কৃতিত্ব গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আমরা তাকে আইসিডিডিআর,বি-তে আমাদের সহকর্মী হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত।

ড. ফিরদৌসী কাদরী, বর্তমানে আইসিডিডিআরবির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি কর্মজীবনে কলেরা, টাইফয়েড এবং অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।  ড. কাদরী  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অফ এক্সপার্টস অন ইমুনাইজেশনের সদস্য ছিলেন। কোভিড-১৯ টিকার ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য গঠিত জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক,  ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক-এর সায়েন্স অ্যাডভাইজারি টিমের মেম্বারসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক অনেক বিজ্ঞান ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি এশিয়ার নোবেল খ্যাত র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার-২০২১, ল’রিয়েল ইউনেস্কো ফর উইমেন ইন সায়েন্স পুরুষ্কার- ২০০০, বিল গেটস স্বীকৃত হিরো ইন দা ফিল্ড-২০২০, কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক পুরস্কার-২০১৮, ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স সি.এন.আর. রাও পুরস্কার- ২০১৩, ফ্রান্স একাডেমি ও সায়েন্স-ক্রিস্টোফার মেরুউক্স পুরস্কার-২০১২,বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদক-২০০৬-সহ উল্লেখযোগ্য অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

২০০৫ সালে আইসিডিডিআরবি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল। আইসিডিডিআরবি ড. ফিরদৌসী কাদরীসহ সকল স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের আগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেশের প্রতি তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এএ/এলএ)