স্টপেজে থামে না বাস, ছাউনিতে বসে না যাত্রী

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৬

লিটন মাহমুদ, ঢাকাটাইমস

বিমানবন্দর যেতে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইয়াসমিন আরা। মধ্যবয়সী এই নারীর মতো আরও অনেককেই বাসের অপেক্ষায় রাস্তায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। রাজধানীর প্রতিটা পয়েন্টেই বাস যাত্রীদের এভাবে অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা যায়।

যদিও শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনেই রয়েছে একটি যাত্রী ছাউনি। তবে সেটি যাত্রীদের ব্যবহারের অনুপেযোগীই বলা যায়। এটি ছাড়াও রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ যাত্রী ছাউনি দখল করেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান কিংবা ভবঘুরেদের আবাসস্থল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজধানীর অধিকাংশ যাত্রী ছাউনিই নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপোযোগী। এর ফলে সাধারণ যাত্রীদের নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বাস থেকে নামতে কিংবা উঠতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

এদিকে নির্দিষ্ট স্টপেজে যাত্রীদের উঠানামার জন্য বাস থামায় না। রাস্তার মাঝখানে গিয়েই বাসে উঠতে হয়। অথচ নিয়মানুযায়ী, যাত্রী ছাউনিতে বাস থামবে, যাত্রী নামবে এবং উঠবে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বাসগুলো যেখানে সেখানে থেমে যাত্রী তুলছে ও নামাচ্ছে। এতে করে সড়ক জুড়ে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনাও ঘটেছে অহরহ।

সরেজমিনে রাজধানীর শাহবাগ, বাংলা মোটর, ধানমন্ডি ৩২, মালিবাগ রেলগেট, আনসার ক্যাম্প, খিলগাঁও রেলগেট, সায়েদাবাদসহ বেশকিছু বাস স্টপেজ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেখা গেছে, যাত্রী ছাউনির কোনোটাই ভ্রাম্যমান দোকান, কোনোটাই হকার, কোনোটাই রিকশা মটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং রাখা, কোনোটাই ভবঘুরে, মাদকাসক্তদের আড্ডা আবার কোনোটি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।

যাত্রীরাও আগের মতোই বাস স্টপেজে না দাঁড়িয়ে, মোড়ে বাস আসতেই ঝুঁকি নিয়ে বাসে উঠে পড়েন। যাত্রীছাউনি বা স্টপেজে বাস না থামার জন্য চালকদের দুষছেন যাত্রীরা।

তারা বলছেন, বাস তো যাত্রী ছাউনির সামনে দাঁড়ায়ই না। চালকরা সব সময় মোড়ে মোড়ে বা মাঝ রাস্তায় বাস থামায়। যাত্রী ছাউনিতে থামলে যাত্রীরা সেখানেই বাসের জন্য অপেক্ষা করত।

অন্যদিকে বাস চালকরা দোষ চাপাচ্ছেন যাত্রীদের ওপর। তাদের ভাষ্য, যাত্রী ছাউনিতে কোনো যাত্রীই থাকে না। তারা বাসের জন্য মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে সেখানেই বাস থামাতে হয়।

নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে যেখানে সেখানে যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে  তুরাগ পরিবহনের চালক ইমরান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাত্রী ছাউনিতে যাত্রীরাই থাকে না। স্টপেজে পৌঁছানোর আগেই তারা হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। বাধ্য হয়ে আমাদেরও সেখানে থামতে হয় এবং যাত্রী উঠাতে হয়।’

নির্ধারিত স্থান ছাড়া কেন গাড়িতে উঠছেন জানতে চাইলে বাংলা মোটর থেকে মিরপুরগামী যাত্রী রমজান আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্টপেজগুলোতে বাস থামে না। মোড়ে না দাঁড়ালে গাড়িতে ওঠা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়।’

এদিন বাংলা মোটর যাত্রী ছাউনিতে কোনও যাত্রী দেখা যায়নি। সেখানে ভ্রাম্যমান বিক্রেতাকে বসে পান সিগারেট বিক্রি করতে দেখা গেল।

মো. আজাদ নামে একজন চাকরিজীবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাস যেখানে থামবে দৌঁড়ে সেখানে গিয়েই বাসে উঠতে হয়। যাত্রী ছাউনিতে বসার সময় কোথায়। বাসে ওঠার চিন্তায় থাকি। যাত্রী ছাউনির চেয়ে বাস দরকার।’

নির্ধারিত যাত্রী ছাউনির সামনে বাস না থামানোর বিষয়ে কথা হয় সদরঘাট-টঙ্গী রুটের বাসচালক রাসেল মিয়ার সঙ্গে। তার দাবি, যাত্রী ছাউনিতে বাস স্টপেজ করা হয়েছে, সেখানে জায়গা খুবই কম। দুটি বাস দাঁড়ালে আর জায়গা থাকে না। তাই সামনে পিছে করে দাঁড়াতে হয়।

যাত্রী ছাউনির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সড়কের পাশে যাত্রী ছাউনি গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রী ছাউনিতে রোদ-বৃষ্টিতে পথচারী ও যাত্রীদের আশ্রয় হয়। তবে ছাউনি অনুযায়ী বাস সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকা প্রয়োজন।’

‘যেসব পরিবহন যাত্রী ছাউনি থেকে যাত্রী তুলবে না, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে এসব ঠিক হবে। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ছাউনিগুলোকে যাত্রীবান্ধব করতে হবে।’

এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাত্রী ছাউনিগুলো যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারছে না। যথেষ্ট তদারকির অভাবে দিন দিন এগুলো নষ্ট হচ্ছে। যাত্রী ছাউনিতে বাস থামুক। স্টপেজগুলোও যাত্রী ছাউনি কেন্দ্রিক হোক। এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

এ ব্যাপারে ঢাকা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সমস্যা নিরসনে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই বাসগুলো যাত্রীছাউনি কেন্দ্রিক হবে।’

একইসঙ্গে যাত্রীদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন বাস মালিক সমিতির এই নেতা। বলেন, ‘যাত্রীরা যদি নির্ধারিত স্থান ব্যতীত বাসে না ওঠে তাহলেও কিন্তু এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/ডিএম)