বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে জানুন এ রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৪

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস বা টিবি একটি সংক্রামক রোগ, যার কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামে এক প্রকার জীবাণু। একসময় এই রোগটি ছিল মানুষের কাছে এক বিভীষিকার নাম। তবে বর্তমানে এটি আর কোনো ভয়ংকর রোগ নয়। সরকার রোগটির ভালো চিকিৎসা বের করেছে এবং মানুষের মধ্যে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

আজ ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এই দিনে আমরা জেনে নেব রোগটির কারণ, লক্ষণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে।

‘যক্ষ্মা’ শব্দটা এসেছে ‘রাজক্ষয়’ থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ অর্থাৎ রোগা হয়ে পড়েন। যক্ষ্মা প্রায় যেকোনো অঙ্গে হতে পারে। ব্যতিক্রম কেবল হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে। গরুর দুধ পাস্তুরায়ণ প্রচলনের আগে অন্ত্রেও অনেক বেশি হতো।

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ

ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে গলার ভেতর থেকে থুতুর সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে। মুখ না ঢেকে কাশলে যক্ষ্মা সংক্রমণিত থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই টিবি।

সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি থাকা, জ্বর, কাশির সঙ্গে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা হওয়া, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষ্মার প্রধান উপসর্গ।

যক্ষ্মা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তখন একে ‘অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষ্মা’ (Extrapulmonary Tuberculosis) বলা হয়।

যেমন প্লুরাতে প্লুরিসি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজনন তন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষ্মা, পরিপাক তন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষ্মা এবং অস্থিকলায় পটস ডিজিস। বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষ্মাকে বলা হয় মিলিয়ারী যক্ষ্মা (Miliary tuberculosis)।

অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসীয় এবং অ-ফুসফুসীয় যক্ষ্মা একসঙ্গে বিদ্যমান থাকতে পারে। পৃথিবীর যক্ষ্মা রোগীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (প্রায় অর্ধেক) ভারতীয় উপমহাদেশবাসী। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্মা হয় না। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বেশি হয়।

যক্ষ্মা কীভাবে ছড়ায়?

বাতাসের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মেশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়।

যক্ষ্মা প্রতিরোধ করার উপায়

জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা, যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা এবং রোগীর কফ থুথু নির্দিষ্ট পাত্রে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা

যখন কোনো এন্টিবায়োটিক যক্ষ্মা রোগের সব জীবাণু ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়, তখনই ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মার সূত্রপাত হয়। ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মার মূল কারণগুলো হলো- পর্যাপ্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করা, ভুল ওষুধ সেবন এবং চিকিৎসার কোর্স সম্পূর্ণ না করা।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

যক্ষ্মার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

কোথায় চিকিৎসা করাবেন

বাংলাদেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা করা হয় এবং ওষুধও দেওয়া হয়।

কী ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

সাধারণ পরীক্ষা, ত্বকের পরীক্ষা, রক্তের পরীক্ষা, কফ পরীক্ষা

অন্যান্য পরীক্ষা

বুকের এক্স-রে পরীক্ষা অথবা সিটি স্ক্যান কালচার টেস্ট

পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও অনেক সময় যক্ষ্মার সংক্রমণ হতে পারে। যেমন- যক্ষ্মার সংক্রমণের ৮-১০ সপ্তাহ পরে তা ত্বকের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তার আগে পরীক্ষা করলে ধরা নাও পড়তে পারে। এইডসের মতো কোনো রোগের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অনেকসময় পরীক্ষায় যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়ে না।

এছাড়া এইডস এবং যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো প্রায় এক রকম হওয়ায় এইডস রোগীদের যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি জটিল হয়ে থাকে। হামের টিকা নিলে এগুলোতে অনেক সময় জীবন্ত জীবাণু (Live virus) থাকে। এর জন্য ত্বক পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা নাও পড়তে পারে।

শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বেশি মাত্রায় ছেয়ে গেলে (Overwheliming TB disease) ত্বকের পরীক্ষায় রোগের জীবাণু ধরা নাও পড়তে পারে। অনেক সময় সঠিকভাবে পরীক্ষা না করলেও এতে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে না।

কী ধরনের চিকিৎসা আছে?

ডটস পদ্ধতিতে অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদী, সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করা হয়। এ জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রোগীর বয়স অনুসারে ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে হয়। যক্ষ্মার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- এন্টিবায়োটিক সেবন। সাধারণত ৬-৯ মাসব্যাপী এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। যক্ষ্মার আরকেটি উন্নত চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/এজে)