দুর্গম এলাকায় শিক্ষার মশাল জ্বালাচ্ছেন লোহাগাড়ার ইউএনও

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:৩২

শাহজাদা মিনহাজ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

শিক্ষার মশাল হাতে লোহাগাড়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবিরাম  ক্লান্তিহীন ছুটে চলেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ইউএনও শরীফ উল্যাহ। একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে পদচারণা শিক্ষার মানোন্নয়নে তার অদম্য ইচ্ছা, প্রচেষ্টা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। তার কর্মকাণ্ডে লোহাগাড়ার শিক্ষাজগতে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। তার কার্যক্রমসমূহের মধ্যে ইউসেট পরীক্ষা, মভ টেস্ট, মেধাবী এ্যাওয়ার্ড, এভরিডে ফাইভ ওয়ার্ডস, এভরিডে থ্রি ওয়ার্ডস, উইনার্স ব্যাগ প্রদান, সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট, পত্রিকায় শিক্ষাবিষয়ক লেখালেখি, অভিভাবক সমাবেশ ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা, সর্বোপরি নিয়মিত স্কুল ও মাদ্রাসা পরিদর্শনের বিষয়টি সকলের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় ও আলোচিত।

লোহাগাড়া উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, অলিগলি এখন ইউএনও শরীফ উল্যাহর ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমসমূহের আলোচনায় মুখরিত ও সরব। নিজ দপ্তরের প্রশাসনিক দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত অত্যন্ত  উদ্যমী এই কর্মকর্তা নিয়মিত ও আকস্মিকভাবে লোহাগাড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ একের পর এক পরিদর্শন করছেন ও কিছু ব্যতিক্রমী উৎসাহ সৃষ্টিকারী ক্লাসও নিচ্ছেন। শিক্ষকদেরকে নিয়মিত প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। লোহাগাড়ায় মাত্র দশ মাসের কর্মকালে তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তা সর্বমহলে এখন ব্যাপক প্রশংসিত। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে লোহাগাড়ায় শিক্ষার মানোন্নয়নে এক নতুন বিপ্লব সাধিত হয়েছে বলে লোহাগাড়ার সর্বস্তরের জনগণ মনে করেন।

গত মঙ্গলবার লোহাগাড়া উপজেলার চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আকস্মিক পরিদর্শন করেন ইউএনও শরীফ উল্যাহ। এদিন লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত সড়াইয়া, মান্দুলার চর, ফারাঙ্গা ও লোহাগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান যাচাই করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চলমান 'এভরিডে থ্রি ওয়ার্ডস'' কার্যক্রমের অগ্রগতি যাচাই করেন। এসময় ক্লাসে ছোট ছোট কিছু প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বিজয়ী ৬ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার হিসেবে 'উইনার্স ব্যাগ' প্রদান করেন। উইনার্স ব্যাগে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়।

একইদিন লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় অবস্থিত সড়াইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত সড়াইয়া এলাকায় একটি উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে মা-বাবাকে অবশ্যই ত্যাগস্বীকার করতে হবে। কষ্ট করতে হবে। সন্তানের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রচেষ্টা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন কঠিন। এ বিষয়টি সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ঝরে পড়া রোধ করা ও বাল্যবিবাহ রোধে  নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সকল সচেতন মানুষকে অনুরোধ জানান। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতেও আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি অনুরোধ জানান।

শিক্ষিত-সচেতন মহল এবং অভিভাবকরা দাবি করেন, ইউএনও'র  শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিকল্পনা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তার পরিচালিত অসাধারণ কার্যক্রমসমূহের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।

ইউএনও শরীফ উল্যাহ বলেন, আমার সকল শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে— শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন করা। সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতনতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে অচিরেই এর সুফল মিলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/এলএ/এসএ)