অন্যান্য ইফতারের সঙ্গে এবার ১৫ রকমের বিরিয়ানি বানানো দেখাব: কেকা ফেরদৌসী

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৫:২১

লিটন মাহমুদ, ঢাকাটাইমস

রান্নার দুনিয়ায় এক অনন্য নাম কেকা ফেরদৌসী। দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করে দেশজুড়ে আলোচিত হন তিনি। একসঙ্গে বিচিত্র পদের খাবার তৈরি করে এবং তা দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের শিকারও হয়েছেন এই রাঁধুনী। কিন্তু সেই সমালোচনা কখনও গায়ে মাখেননি তিনি। সমালোচনা বা কটাক্ষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আবারও রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান ও নিত্যনতুন খাবারের রেসিপি নিয়ে তিনি ফিরছেন। এবারের রমজানে ১৫ ধরনের বিরিয়ানি নিয়ে আসছেন কেকা ফেরদৌসী।

শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস। রোজা উপলক্ষে প্রতিদিনের ইফতারিতে দেখা মেলে নানা সুস্বাদু ও উপাদেয় খাবারের পসরা। সেই ধরনের কিছু ইফতারের পদ ও নিত্য নতুন কিছু রেসিপি নিয়ে আবারও হাজির হচ্ছেন কেকা ফেরদৌসী। রমজানের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত চ্যানেল আইতে শুরু হচ্ছে কেকা ফেরদৌসীর ধারাবাহিক ও জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ভিম মনোহর ইফতার’। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠানটি এবার ২৫ বছরে পা রাখলো। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে এই অনুষ্ঠান, রমজানে খাবারের নতুন আকর্ষণ ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

এবারের রমজানে আপনার অনুষ্ঠানে চমক কী থাকছে? কেকা ফেরদৌসী বলেন, 'এবারের রমজানের অনুষ্ঠানটি আগের থেকে আরও বেশি জাঁকজমক হবে। আমি সবসময় সেলিব্রিটিদের নিয়ে আলাপ করি এবং রান্না করি। দর্শকরা যেসব সেলিব্রেটি সবথেকে বেশি পছন্দ করেন, তেমন মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা আমার সঙ্গে থাকবেন।'

ইফতারের খাবারে কী চমক থাকছে? কেকা ফেরদৌসী বলেন, ‘অনেক অনেক মজাদার খাবার হবে এবার। অন্যান্য ইফতারের সাথে সাথে এইবার আমরা ১৫ রকমের বিরিয়ানি বানানো দেখাবো। আমি আশাবাদী এবারের অনুষ্ঠানটা সবাই অনেক পছন্দ করবে এবং নতুনত্বে ভরা সব রান্না এবং মজাদার রান্না থাকবে। এছাড়া রোজার রান্নার পাশাপাশি ইফতারের অনুষ্ঠানে আমরা ঈদের রান্নার আইটেমও রেখেছি। এছাড়া আরো কিছু চমক আছে, সেগুলা সম্পর্কে আমি এখনই বলছি না। আপনারা শিগগিরই দেখবেন।’

ফেসবুকে আলোচনার পাশাপাশি অনেক সমালোচনা হয় আপনাকে নিয়ে। বিষয়টি কিভাবে দেখেন? কেকা বলেন, যাকে মানুষ ভালোবাসে তাকে নিয়েই সমালোচনা করে। আমি জানি পৃথিবীতে যত বাঙালি মানুষ আছে আমার রান্না দেখে তারা আমাকে ভালবাসেন। আর ভালোবাসে বলেই কোনো কিছু খারাপ লাগলে সেই কথাটা অকপটে জানিয়ে দেন।  তবে আমি সবসময় একটা কথা বলি, বিনা সুতার মালা- যে মালা সুতা দিয়ে গাঁততে হয় না। আর সুতো দিয়ে গাঁথা হয় না বলে সেই মালাটা ঝরে পড়ে যায়। এজন্য দর্শকরা যারা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করেন, সেসব কথা আমি মনে রাখি না, বিনি সুতার মালার মতো সেগুলোকে আমি ফেলে দেই। আর যারা আমাকে ভালবেসে কমেন্ট করে, তাদের সেই কথাগুলোকে আমি সুতায় বেঁধে মালার মতো করে গলায় বেঁধে রাখি।

রমজানে মানুষের অতিরিক্ত খাবারের বিষয়ে কী পরামর্শ আপনার?

কেকা ফেরদৌসী বলেন, 'আমি যখন কোনো কিছু রান্না করি তখন দর্শকদের উদ্দেশে বলেই দেই- কে কতটা খাবেন। যাদের ডায়াবেটিকস আছে মিষ্টি কিছু তৈরি করলে তাদেরকে বলে দেয় আপনারা এটা কতটুকু খেতে পারবেন। আবার যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদেরকে বলি যে, তেল চর্বি জিনিস বেশি খাবেন না। আবার যারা প্রেগন্যান্ট আছে তারা কী খাবেন, কী খাবেন না সেসব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ।'

রন্ধন পেশায় যারা আসতে চায়, তাদের উদ্যেশ্যে আপনার বক্তব্য কি?

কেকা ফেরদৌসী: 'যারা ভালো রান্না করতে চান তাদেরকে বলেন, বিশেষ কিছুর জন্য আপনাদের অবশ্যই রান্নার স্কুলে যাওয়া উচিত। আমি যখন স্কুলে পড়াশোনা করতাম ক্লাস নাইনে তখন বাংলাদেশের রান্নার স্কুল খুব একটা ছিল না। এখন আমি আমার পরিবারকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রান্নার স্কুলে গিয়েছি।'

১৯৬০ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন কেকা ফেরদৌসী। তার বাবা ফজলুল হক ছিলেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। মা কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। স্বামী ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক ও শিল্পপতি আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু। দুই সন্তান সোনালী ও আকাশ।

১৯৮০ সালে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সময় বিদেশি রান্নার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ও বাংলাদেশি রান্না বিদেশিদের কাছে পরিচিত করেন। ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ফিরে দেশি-বিদেশি রান্না নিয়ে তার আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হয়।

‘কেকা ফেরদৌসীর রান্নাঘর’ নামে একটি স্কুল রয়েছে তার। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রাইভেট চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান করে চলেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় কেকা ফেরদৌসীর রান্না বিষয়ক লেখা। ২০১১ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে স্বাস্থ্যসচেতন রান্নার বইয়ের জন্য ‘গুরম্যান্ড কুক বুক অ্যাওয়ার্ডস’ লাভ করেন এই রন্ধনশিল্পী।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এলএম/কেএম)