বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করেছিলেন বলেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ২০:৩৪ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩, ২১:৪১

ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার

২৬ মার্চ বাঙালীর মহান স্বাধীনতা দিবস। এদিন বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্বাধীনতা পাওয়র জন্য আমাদেরকে নয় মাস লড়াই করতে হয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।

ঘোষনাটি ছিলো এরকম: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চ‚ড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

স্বাধীনতা যে কোনো জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও তা এক মহাসত্যি। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে রক্তস্নাত পথ ধরে। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষকে আত্মোৎসর্গ করতে হয়েছে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারা রাতের আঁধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে ২৬ মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ডাক দেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আÍসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আর এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহিমান্বিত বিজয়।

১৯৭১ সালের আগে ৭ই মার্চের বিশাল জনসভায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্টই ঘোষণা করেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তিযুদ্ধ। এই সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ-দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচার-নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসের সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছিল।

মহান স্বাধীনতার দিনে আমরা স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা নিগৃহীত দুই লাখ মা-বোনকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু-সুহুদ, বিশাল হুদয় বিদেশি বন্ধুদের। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীকে যার রাজনৈতিক দুরদর্শিতার কারনে সমগ্র বিশ্বের জনমত পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন করেছিলো। দল মত নির্বিশেষে ভারতের প্রতিটি জনগন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের সমর্থন ও সহায়তা করায় আমরা তাদের কাছে চীর কৃতজ্ঞ। 

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশ। সম্ভাবনার দিগন্তে পত পত করে উড়ছে পতাকা। কোনো চক্রান্তই থামাতে পারছে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন রথ। তার একনিষ্ঠ তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ কয়েকবার এভারেস্ট বিজয় করেছে, বাংলাদেশের শান্তি মিশন সারা বিশ্বে কত সুনাম কুড়িয়েছে, বাংলাদেশের ক্রীড়া জগৎ বিশেষ করে ক্রিকেট কত উন্নত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এসবকিছুই সম্ভব বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা। এ জনগণ দিয়ে সবকিছুই সম্ভব।

পরিশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। দুনিয়ার কোনো জাতিকে তাদের স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত দিতে হয়নি। রক্ত দিয়ে কেনা এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এদেশের মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে পথ রচনায় চাই আত্মপ্রত্যয় এবং আত্মবিশ্বাস। চাই দেশপ্রেম এবং হার না মানা মনোভাব। বাংলাদেশের মানুষ রূপকথায় ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে উড়াল দেওয়ার সামর্থ্য দেখিয়েছে। বিশ্বজয়ের সামর্থ্য দেখাতে তাদের আরও প্রত্যয়ী হতে হবে। হতে হবে শৃঙ্খলাপরায়ণ। চিন্তা-চেতনা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে নেতিবাচক সব উপাদান। 

লেখক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সাবেক ভিপি, ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের আওয়ামী লীগ নেতা ও বিবিএস গ্রুপ এবং নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান।